নিজস্ব প্রতিবেদনঃ এবার ২০২৪ সাল হচ্ছে ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day 2024)। দীর্ঘ দুশো বছর ব্রিটিশদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার পর ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের দেশ। তবে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই ২৬ জনুয়ারি তারিখটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্রিটিশ শাসকদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ভারতকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে গান্ধীজীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গান্ধীজীর স্বয়ং ২৬ জানুয়ারিকে ‘স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস’ হিসেবে আখ্যা দিতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ আরো বৃহত্তর পরিসরে শুরু হয়। ১৯২৯ সালের শেষ দিকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন অত্যন্ত জোরদার হয়ে ওঠে।
এ সময় পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে পূর্ণ স্বরাজ গ্রহণ করার শপথ নেওয়া হয়। এরপর ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামকারী ব্যক্তিরা ১৯৩০ সালে ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস বলে ঘোষণা করেন। যদিও ব্রিটিশরা সে সময় আন্দোলনকারীদের নানা ভাবে দমন করে এবং বিপ্লবীদের সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
কিন্তু এ সময় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ব্রিটিশরা কঠোর হস্তে দমন করলেও ভারতীয়দের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করতে পারেনি। এই কারণে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে আরও তীব্র আকার নিতে শুরু করে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিধ্বংসী আগুন ছড়িয়ে পড়ার সময়কালেই তৎকালীন ভারত শাসক অর্থাৎ ব্রিটিশরা ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধতে অংশগ্রহণ করে।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ হওয়ার পর ভারতবর্ষের বীর বিপ্লবীদের স্বাধীনতার জন্য চরম মনোভাবের প্রকাশ দেখতে পেয়ে অবশেষে ব্রিটিশরা ভারতকে স্বাধীনতা প্রদানের ভাবনা চিন্তা শুরু করে এবং লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ভারতে পাঠানো হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয় ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের মধ্যেই ব্রিটিশরা ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীনতা প্রদান করবে।
অবশেষে মাউন্টব্যাটেন ভারতে আসেন ভারতের স্বাধীনতা ও ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাজনের পরামর্শ দিতে। এসময় শুরু হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। তবে শেষ পর্যন্ত মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুসারেই ভারতকে দুটি পৃথক রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজিত করে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় এবং ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।
তবে ১৫ আগস্ট ভারত সম্পূর্ন ভাবে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়ার আগে ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি দিনটিই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাদের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করতেন।
ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর নিয়ম শৃঙ্খলা সহযোগে সমস্ত ভারতবর্ষকে পরিচালনা করার জন্য বিশেষ একটি সংবিধানের প্রয়োজন দেখা দিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই কারণেই একটি সংবিধান সভার কথা ঘোষণা করা হয়। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু, ডক্টর বি আর আম্বেদকর, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল প্রমুখ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয় এই সংবিধান সভা।
১৯৪৭ সালের ২৯ আগস্ট বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের স্থায়ী সংবিধানের একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান খসড়া কমিটি, সংবিধান সভায় তাদের নির্মিত ভারতীয় সংবিধানের একটি খসড়া জমা দেয়। এরপর এই ভারতীয় সংবিধান সংবিধান সবার অনুমোদন লাভ করে এবং তা পৃথিবীর দীর্ঘতম লিখিত এবং জটিল সংবিধান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫০ সালের এই ২৬ জানুয়ারি তারিখটিতেই ভারতবর্ষের এই সংবিধান কার্যকর হয়।
১৯২৯ সালে লাহোরে পণ্যে জহরলাল নেহেরু জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন ১৯৩০ সালে ২৬ জানুয়ারীর মধ্যে ব্রিটিশ সরকার যদি ভারতকে স্বাধীন ডোমিনিয়ন এর মর্যাদা না দেয় তবে ভারতের পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা করা হবে। এই ঐতিহাসিক দিনটির প্রতি মর্যাদা প্রদান করতেই স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার দিন হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকেই। এর আগে ১৯৩৫ সালে প্রণীত ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতের শাসন পরিচালনা করা হতো।
এদিন ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনকে সম্পূর্ণ ভাবে বাদ দেওয়া হয়। নব নির্মিত লিখিত ভারতীয় সংবিধানের বিভিন্ন ধারা অনুসারে স্বাধীন ভারত এই ২৬ জানুয়ারি দিনটি থেকেই সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই কারণে ২৬ জানুয়ারি দিনটি ভারতের জাতীয় দিবস হিসেবে অন্যতম একটি দিন।
ভারতের ইতিহাসে ২৬ জানুয়ারি দিনটি সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে। এই দিন দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন স্থানে দেশে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং জাতীয় সংগীত শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবসের (Republic Day 2024) প্রধান কর্মসূচি পালিত হয় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে, কেডি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত। এদিন দিল্লি রাজপথে আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।
সমস্ত কর্মসূচির মাধ্যমে এই দিন স্বাধীন ভারতের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। দিল্লিতে এ দিনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং দিল্লিতে অবস্থিত ইন্ডিয়া গেটের এক পাশে শহীদ জওয়ানদের উদ্দেশ্যে নির্মিত অমর জওয়ান জ্যোতিতে শ্রদ্ধাসহ কালে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন এবং দেশের জন্য আত্ম বলিদান করা সৈন্যদের উদ্দেশ্যে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন, এই সপ্তাহে মাত্র ২ দিন খোলা থাকছে ব্যাঙ্ক! কবে কবে দেখুন
তবে শুধু দিল্লিতেই নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয় ২৬ জানুয়ারির নানা কর্মসূচি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতেও ছাত্র ছাত্রীদের নিয়েও পালিত হয় পতাকা উত্তোলন পর্ব এবং নানা অনুষ্ঠান। এমন আরও নানা বিষয়ে জানতে আমাদের সাথে যুক্ত থাকার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।
Written by Joyeeta Mukherjee.
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন