বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য: প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, অবদান, এবং প্রয়াণের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
- জন্ম: ১ মার্চ, ১৯৪৪, কলকাতা
- পরিবার: কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কাকা
- শিক্ষাজীবন: শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবন ও কর্ম
রাজনৈতিক জীবন:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৬৬ সালে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে। ১৯৭২ সালে তিনি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়লাভ করেন। এরপর থেকে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব পালন করেন।
মুখ্যমন্ত্রীত্ব
প্রাথমিক পর্যায়:
- ১৯৯৬: স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রী
- ১৯৯৯: ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী
- ২০০০: মুখ্যমন্ত্রী (জ্যোতি বসুর পরে)
মুখ্যমন্ত্রীত্বের মেয়াদ:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন এবং ২০১১ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। তাঁর মুখ্যমন্ত্রীত্বের সময় বাংলায় ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের শেষের ১০ বছর তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তথ্য সংস্কৃতি দফতর, পর্যটন, নগর উন্নয়ন সহ বিভিন্ন দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী বা সাময়িক দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রয়াণ ও শেষ জীবন
অসুস্থতা ও চিকিৎসা:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে COPD এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য। শেষের কয়েক বছরে তিনি প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৮ আগস্ট, ২০২৪ সালে বালিগঞ্জে তাঁর পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে।
পরিবার:
তিনি স্ত্রী এবং এক সন্তান রেখে গেছেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁর মৃত্যু হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও দায়িত্ব
দায়িত্ব | সময়কাল |
---|---|
তথ্য সংস্কৃতি দফতর | বিভিন্ন সময়ে |
পর্যটন ও নগর উন্নয়ন | বিভিন্ন সময়ে |
স্বরাষ্ট্র দফতর | ১৯৯৬ থেকে |
মুখ্যমন্ত্রী | ২০০০-২০১১ |
রাজনৈতিক অবদান
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সিপিএমের রাজ্য কমিটি থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
স্মরণীয় মুহূর্ত ও ঘটনাবলী
- প্রথম বিধানসভা নির্বাচন:
১৯৭৭ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেন এবং জয়লাভ করেন। এরপর থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। - নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের ঘটনাবহুল দিনগুলো ঘটে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
রাজনৈতিক জীবন ও ব্র্যান্ড ইমেজ
ব্র্যান্ড বুদ্ধ:
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তাঁর সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, বাঁদিকে আঁচড়ানো চুল, গাম্ভীর্যপূর্ণ গলার স্বর, এবং স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলায় কথা বলার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি আজীবন বামপন্থায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং বিতর্কমুক্ত জীবনযাপন করেছেন। তাঁর এই অনন্য ব্যক্তিত্বই তাঁকে ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’ করে তুলেছিল।
শেষ জীবন ও মৃত্যু
অসুস্থতা:
শেষের কয়েক বছরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, এবং করোনাভাইরাসের মতো রোগে ভুগছিলেন। তিনি বারবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং বারবারে ছুটতে হয়েছে হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত তিনি ৮ আগস্ট, ২০২৪ সালে সকাল ৮:২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গুরুত্বপূর্ণ তালিকা
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবদান:
- সিপিএমের রাজ্য কমিটি সদস্য
- বিভিন্ন দফতরের দায়িত্ব পালন
- ২০০০-২০১১ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীত্ব
অসুস্থতা ও চিকিৎসা:
- COPD
- ফুসফুসের সংক্রমণ
- বারবার হাসপাতালে ভর্তি
প্রয়াণের প্রভাব
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গোটা রাজনৈতিক মহল শোকস্তব্ধ। রাজ্যের মানুষের মধ্যে একজন মহীরুহ পতনের অনুভূতি বিরাজ করছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের ঘটনাবহুল দিনগুলি, এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে চলে যাওয়ার পরও পাম অ্যাভিনিউর ছোট্ট ফ্ল্যাটে একাকী জীবনযাপন তাঁর স্মৃতিতে রয়ে গেছে।
সারসংক্ষেপ
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন বিশিষ্ট বামপন্থী রাজনীতিক ছিলেন যিনি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার রাজনৈতিক আকাশে নক্ষত্রপতন হয়েছে। তাঁর অবদান, স্মরণীয় মুহূর্ত, এবং ব্র্যান্ড ইমেজ তাঁকে সর্বদা স্মরণীয় করে রাখবে। তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতেও তিনি একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর প্রয়াণে গোটা রাজ্যের মানুষ শোকস্তব্ধ।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন