নিজস্ব প্রতিবেদনঃ এই আর্থিক বর্ষে রিটার্ন দাখিল (ITR 2024) করার আগে আয়কর সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পরিষ্কার করতে চাই , কারণ এগুলো নিয়ে করদাতাদের মধ্যে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে এবং অনেকেই অনেক ভ্রান্ত ধারণাও পোষণ করেন। নিচে আপাতত ১২ দফা বিষয়ের উপর কিছু পষ্টীকরণ দেওয়া হল সকলের জ্ঞাতার্থে। আশা করি এতে আপনাদের কর-পরিকল্পনা করতে এবং রিটার্ন দাখিল করতে বেশ কিছুটা সাহায্য হবে। আসুন তাহলে বিষয়গুলো নিয়ে একটু চর্চা করা যাক।
(1) বেতন ও পেনশনভোগী করদাতারা রিটার্ন দাখিল (ITR 2024) করার সময় তাদের সুবিধা মতো ট্যাক্স রেজিম নির্বাচন করতে পারবেন এই আর্থিক বছরে। দুটি রেজিমের মধ্যে যেটিতে আপনার করভার (tax liability) কম হবে, আপনি স্বচ্ছন্দে সেই ট্যাক্স রেজিম নির্বাচন করতে পারবেন।
Income Tax New and Old Regime (ITR 2024)
(2) এই বছর (2024) যে ট্যাক্স রেজিমে রিটার্ন ফাইল করবেন, পরের বছরে (2025) আপনি (বেতন/পেনশনভোগী করদাতা) চাইলে সেই ট্যাক্স রেজিমটি বদলে অন্যটিতে যেতে পারবেন। তবে 2026 সাল থেকে ট্যাক্স রেজিম নির্বাচনের বিষয়টি কি হবে বা কি হতে চলেছে, তা পরের বছরের (2025) বাজেটের পর বোঝা যাবে। আপাতত এই দুই বছরে নিশ্চিন্তে আপনি ট্যাক্স রেজিম বদল করতে পারবেন আপনার সুবিধা মতোন।
(3) এই বছর থেকে ই-ফাইলিং পোর্টালে যে কোনো রিটার্নের ক্ষেত্রেই ‘বাই ডিফল্ট’ হিসাবে থাকবে নিউ ট্যাক্স রেজিম, আগে যেটি থাকতো ওল্ড ট্যাক্স রেজিম। সেখানে অবশ্য রেজিম নির্বাচনের সুবিধা পাবেন বেতন ও পেনশনভোগী করদাতারা। তবে এদের মধ্যে যারা এবার ওল্ড ট্যাক্স রেজিমেই রিটার্ন দাখিল করতে চান,তাদের অতি অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করার ডিউ ডেটের মধ্যেই তা করতে হবে, যা সাধারণত হয় 31শে জুলাই( যদি না সরকার এই তারিখ বর্ধিত করে)।
এটা না করলে তারা রেজিম নির্বাচনের সুবিধাটি হারাবেন , তখন তাদের (বিলেটেড) রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে নিউ ট্যাক্স রেজিমই বেছে নিতে হবে। তাই ওল্ড ট্যাক্স রেজিমে রিটার্ন দাখিলকারীদের এই ‘ডিউ ডেটে’র বিষয়টি বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হবে এবার থেকে।
(4) এই বছর থেকে নিউ ট্যাক্স রেজিমে 50,000 টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশান থাকছে। তবে সঞ্চয়জনিত অন্যান্য ছাড়ের ধারাগুলি এখানে পাবেন না (দু-একটি ব্যতিক্রমী ধারা ছাড়া)।
(5) ওল্ড ট্যাক্স রেজিমে (ITR 2024) গতবারের মতো ছাড়ের সমস্ত ধারাগুলো অপরিবর্তিতই আছে। এখানে কোনো পরিবর্তন হয় নি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে 80CCD(1B) ধারায় NPS -এ বিনিয়োগের উপরে বছরে সর্বোচ্চ 50,000 টাকা পর্যন্ত যে ছাড় আছে তা কেবল ওল্ড ট্যাক্স রেজিমেই পাওয়া যাবে, নিউ ট্যাক্স রেজিমে এই ধারায় কোনো ছাড় মিলবে না।
আয়কর দেবার আগে দেখুন বাকি বিষয়গুলি
(6) এই বছর নিউ ট্যাক্স রেজিমে 87A ধারার রিবেটে একটি বাড়তি সংযোজন হয়েছে , যাকে বলা হচ্ছে 87A ধারার “মার্জিনাল রিলিফ”। এখানে কোনো করদাতার গ্রস ইনকাম 7.5 লাখ টাকা পর্যন্ত হলে ( অর্থাৎ, টোটাল ট্যাক্সযোগ্য ইনকাম সেক্ষেত্রে 7 লাখ টাকা পর্যন্ত), পুরো করভারটাই তার মকুব হয়ে যাচ্ছে 87A ধারায় প্রাপ্ত রিবেটের জন্য।
এর পরেও আরো প্রায় 27,776 টাকা পর্যন্ত বাড়তি গ্রস ইনকামের জন্যেও ( অর্থাৎ, 7,77,776 টাকা গ্রস ইনকাম পর্যন্ত) পুরোটা না হলেও কিছুটা ছাড় করদাতা অবশ্যই পাবেন , যার পরিমাণ সর্বোচ্চ 24,999 টাকা এবং সর্বনিম্ন 1 টাকা। অর্থাৎ এখানে ছাড়ের পরিমাণটা ব্যক্তিভিত্তিক আলাদা আলাদা হবে।
এটাই হল মার্জিনাল রিলিফ – তবে এতে করদাতার করভার পুরোপুরি করশূন্য হবে না। ই-ফাইলিং পোর্টালে এই বিশেষ রিলিফটি নির্দিষ্ট আয়ের করদাতাদের ক্ষেত্রে অটো-ফিল থাকবে। তবে 87A ধারায় এই ‘বাড়তি’ মার্জিনাল রিলিফটি কিন্তু ওল্ড ট্যাক্স রেজিমে নেই।
ট্যাক্স ফাইলের সময়ে নতুন এবং পুরানো রেজিম
(7) রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ে স্টাফেদের উদ্দেশ্যে আবেদন, যারা বেতন থেকে আগাম কর কাটান আপনারা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন থেকে TDS কাটার শেষ কিস্তিটি দিন। মার্চ মাসের বেতন থেকে TDS কাটাবেন না (বিগত চার বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এটা বলা হচ্ছে)।
একান্তই যদি মার্চ মাসেও কিছু ট্যাক্স দিতেই হয় , তাহলে বেতনের পরিবর্তে ই-ফাইলিং পোর্টালের ই-পে ট্যাক্স ব্যবহার করে অনলাইনে অ্যাডভান্স ট্যাক্স দিতে পারেন 15ই মার্চের মধ্যে। বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে এটি একটি পরামর্শমাত্র।
(8) দুটি ট্যাক্স রেজিমের ক্ষেত্রেই 87A ধারায় প্রাপ্ত মূল ও প্রান্তিক ছাড় শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেইনের (STCG) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তবে LTCG’র ক্ষেত্রে 87A ধারায় ছাড় মিলবে না (ব্যতিক্রম 112 ধারার LTCG)।
আরও পড়ুন, প্যান কার্ডে মোবাইল নাম্বার ও ই-মেইল পরিবর্তন করুন ফ্রিতেই! পদ্ধতি দেখুন
(9) বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় আয়কর নিয়ে যে 192-কম্পিউটেশন শিট পূরণ করে জমা দিতে হচ্ছে, সেখানে ক্যাপিটাল গেইন থেকে আয় (যদি কারো থাকে) এখন দেখাতে হবে না। এটা জুন-জুলাই মাস নাগাদ AIS দেখে সরাসরি আপনার ব্যক্তিগত রিটার্নে দেখাবেন।
(10) যে সমস্ত করদাতা চলতি আর্থিক বছরে এরিয়ারবাবদ টাকা পেয়েছেন , সেটা পুরোটাই এই বছরের রিটার্নে তাঁর মোট আয়ের সাথে যুক্ত করে দেখাতে হবে। এর দরুণ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর করভার (tax liability) বেড়ে যেতে পারে।
তবে সেই বাড়তি করভার কিছুটা লাঘব করার জন্য তিনি 10E ফর্ম ফিলাপ করে (যা ই-ফাইলিং পোর্টালে লগিন করে দাখিল করতে হয় এবং তা ই-ভেরিফাইও করতে হয়) এই এরিয়ারবাবদ আয়কে সংশ্লিষ্ট বছরগুলিতে ভাগ করে 89A ধারায় কিছুটা ছাড় নিতে পারবেন।
এর জন্য সেই বছরগুলির ফর্ম-16 এবং রিটার্নগুলি সংগ্রহ করে হাতের কাছে রাখুন। এপ্রিল মাসের পরে ই-ফাইলিং পোর্টালে এই 10E ফর্মটি সক্রিয় হলে তখন এই কাজটি করা যাবে,এখন নয়। তবে হিসাবটি এখন থেকেই করে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন, ট্যাক্স ফাইলের আগে দেখুন, একবার ভুল হলেই সুযোগ হাতছাড়া!
(11) রিটার্ন দাখিল করার সময় আপনার আয়ের সমস্ত ধরণের উৎস অনুসারে সঠিক রিটার্ন নির্বাচন করবেন। এটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে AIS আপনাকে সাহায্য করবে। AIS এ ক্যাপিটাল গেইন বাবদ আয় থাকলেই (শেয়ার বিক্রয়, জমি-বাড়ি বিক্রয়,মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট রিডিম করা প্রভৃতি) সেখানে ITR-2 বাছতে হবে, কারণ ITR-1’এ CG (Capital Gains) সিডিউলটি নেই।
AIS মোতাবেক যাদের ক্যাপিটাল গেইনস্ খাত থেকে আয় বা ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা যদি জোর করে ITR-1 দাখিল করতে চান সেক্ষেত্রে তাঁরা ‘ডিফেক্টিভ রিটার্ন’র নোটিশ পেতে পারেন আয়কর দপ্তরের পক্ষ থেকে। তাই এই বিষয়ে যথেষ্ট সাবধানতা আগেই অবলম্বন করে সঠিক রিটার্ন নির্বাচন করতে হবে।
(12) বেতনভোগী করদাতাদের নিজ নিজ সার্ভিস কনডাক্ট রুলস অনুসারে আয়ের উৎস সঠিক রাখা ও সঠিক রিটার্ন নির্বাচন করাটা একান্ত আবশ্যিক।
Written by Abhijit Sengupta,
Purba Bardhaman
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন