নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ঘুরু ঘুরু মন, শান্ত করার খাবার নিয়ে হাজির হলাম। পাহাড়ের ভ্রমণ নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। থাকছে গ্যাংটক এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভ্রমণ গাইড (Gangtok Tour Guide)। বেশি নয়, মাত্র ৫৫০০ টাকাতেই এভাবে ঘুরে আসা যায় স্বপ্নের পাহাড়।
কথায় বলে বাঙালির ‘পায়ের তলায় সর্ষে’। সুযোগ পেলেই বাঙালি হারিয়ে যেতে চায় প্রকৃতির কোলে। তাছাড়া ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ তো দেখা যায় না। একঘেয়ে কাজ থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে প্রকৃতির আশ্রয় নিতে চায় মানুষ। আজ এই প্রতিবেদনে আপনাদের এমন একটি শৈল শহরের সন্ধান দেবো যেখানে পৌঁছে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন।
Gangtok Tour Guide in Bengali
উত্তর-পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র সিকিমের রাজধানী হল এই গ্যাংটক শহর। পূর্ব হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই গ্যাংটক (Gangtok Tour Guide) শহরে সারা বছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে গা ভাসানোর জন্য। পরিষ্কার আকাশে বরফের চাদরে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাওয়ার জন্য এখানে পর্যটকের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
সেই সঙ্গে উত্তর সিকিমের বরফ, নাথুলা পাস, গ্যাংটকের রোপওয়ে ইত্যাদির আকর্ষণ তো আছেই। সম্পূর্ণ গ্যাংটক ভ্রমণে কোথায় যাবেন, কোন কোন স্থান অবশ্যই দর্শন করবেন, কত দিনের জন্য আপনার ট্যুর হলে সব দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারবেন এবং সর্বমোট খরচ কত হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
যাত্রা শুরু কোলকাতা থেকে
কলকাতা থেকে গ্যাংটক এর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করতে হলে প্রথমেই শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গের কোনো ট্রেনে আপনাকে সফর করতে হবে। তার জন্য সব থেকে ভালো হবে শিয়ালদহ থেকে রাতের দিকের কোনো ট্রেনে চড়ে যাত্রা শুরু করা। সেক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি স্টেশনে। শিয়ালদহ থেকে বেশ অনেকগুলি ট্রেনই রাতের দিকে উত্তরবঙ্গ সফরের জন্য আপনার কাছে ভালো অপশন হতে পারে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শিয়ালদহ থেকে সন্ধ্যা ৭:৪০ মিনিটের উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, রাত ৮:৩৫ এর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, রাত ১০:০৫ এর দার্জিলিং মেল, রাত ১১:২০ মিনিটের পদাতিক এক্সপ্রেস ইত্যাদি। এই ট্রেন গুলিতে যাত্রা শুরু করলে আপনি পরের দিন সকালেই পৌঁছে যাবেন আপনার নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ভাড়া স্লিপারে মাথাপিছু ৩৩০-৩৬০ টাকা, এবং এসি কোচে ৮৯৫-৯৪৫ টাকা।
শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক- গাড়ি ভাড়ার হিসেব
মোটামুটি ১০ ঘণ্টায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার পর স্টেশনের বাইরে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। শেয়ারে বা পুরো গাড়ি রিজার্ভ করে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় গ্যাংটকে। শেয়ারের ক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা, এবং গাড়ি রিজার্ভ করতে গেলে খরচ হবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ১১৫ কিলোমিটার গাড়িতে সফর করে ৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন গ্যাংটকে।
গ্যাংটক ম্যালের কাছে হোটেলগুলি বেশ খরচ সাপেক্ষ। তবে এখানে পাশাপাশি অবস্থিত কমদামী দুটি হোটেল আছে। সেগুলি হলো হোটেল বেন, যেখানে ঘর ভাড়া প্রতিদিন প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা। এর পাশেই আছে হোটেল বাবুমশাই। ১০০০-১২০০ টাকাতে এখানেও মিলবে ভালো রুম। ম্যালের কাছে অবস্থিত হোটেল সোয়াঙ্ক-এ ভাড়া বেশি হলেও এর মান আরো উন্নত। হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পর ঘুরে বেড়ানো আর প্রকৃতিকে উপভোগ করার পালা।
ম্যালের মনমুগ্ধতা
সন্ধ্যার ঝলমলে পরিবেশে গ্যাংটকের প্রাণকেন্দ্র ম্যালের সৌন্দর্য আপনার মন জিতবেই। কিন্তু এরপর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপনাকে অবশ্যই সেরে ফেলতে হবে। গ্যাংটক আসার পরবর্তী দিনে আপনি নাথুলা পাস সহ আরো অন্যান্য স্থানগুলি যদি ঘুরে দেখতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে হোটেল থেকেই পারমিট বের করতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ট্রাভেল কার্ড তৈরি করতে হবে।
পারমিট এর জন্য লাগবে দু কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো, ভোটার কার্ডের জেরক্স এবং কিছু টাকা। এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, এই কাজটি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে ভোটার কার্ডই লাগবে। সেই সঙ্গে এও মাথায় রাখতে হবে যে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলির জেরক্স ওখানে কাজে লাগবে সেগুলি অবশ্যই অরিজিনাল কপিটি আপনার কাছে থাকা প্রয়োজন।
পরের দিন সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়তে হবে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে ব্যবস্থা করে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গুলি থাকবে গাড়ির ড্রাইভারের কাছে। এবার আপনার শুধু প্রকৃতিকে উপভোগ করার পালা। এক্ষেত্রে শেয়ার গাড়িতে খরচ হবে মাথাপিছু ৬০০-৮০০ টাকা এবং রিজার্ভের ক্ষেত্রে খরচ হবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। ছাঙ্গু যাওয়ার রাস্তাটি আপনার মন জয় করে নেবে।
গ্যাংটক এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা
মেঘ ও রোদের খেলা, আবার শীতকালে রাস্তা জুড়ে পড়ে থাকা বরফ দেখতে দেখতে পৌছে যাবেন ১২৩১৩ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ছাঙ্গু লেকে। পাশেই থাকা ইয়াকের পিঠে চড়ে ছবি তুললে আপনার খরচ হবে ১০০ টাকা এবং এগুলির পিঠে উঠে ১০০ মিটার করলে আপনার খরচ হবে মাথাপিছু ৫৫০ টাকা। এই লেকের কাছেই সকাল আটটা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত মাথাপিছু ৩৬৫ টাকা খরচ করে রোপওয়ের অনবদ্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এরপর এখান থেকেই পৌঁছে যেতে পারেন ১২৬৫১ ফুট উঁচু নিউ বাবা মন্দিরে।
বীর সৈনিক বাবা হরভজন সিংহ কর্তব্যরত অবস্থায় এখানে মারা গেলে ভারত সরকার তাকে পলাতক বলে ঘোষণা করে। কথিত আছে এরপর তিনি অপর এক সৈনিককে স্বপ্নে তার মৃতদেহ কোথায় আছে সে সম্পর্কে জানান। জানা যায় আজ পর্যন্ত নাকি তার আত্মা ভারত-চীন সীমান্ত এলাকায় ঘোড়ায় চড়ে পাহারা দেয়। মন্দিরের পাশেই অবস্থিত একটি ঝর্ণা দেখে গাড়ি করে পৌঁছে যাবেন ১৪১৪০ উচ্চতা বিশিষ্ট ভারত চীন সীমান্তে অবস্থিত নথুলা পাসে। সোম ও মঙ্গলবার এই স্থান বন্ধ থাকে।
পরের দিন বেরিয়ে পড়ুন গ্যাংটক শহরের পার্শ্ববর্তী স্থানগুলি দর্শন করতে। সারাদিনের জন্য ২০০০ টাকায় গাড়ি রিজার্ভ করে চলে যান তাসি ভিউ পয়েন্ট, এখন থেকে পরিষ্কার ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে মন ভরে দর্শন করে ফেলুন। তারপর হনুমান টক, লাসা ওয়াটার ফলস, গণেশ টক, প্ল্যান্ট কনজারভেটরি, গ্যাংটক রোপওয়ে ইত্যাদি।
আরও পড়ুন, অযোধ্যার রাম মন্দির দর্শন, সাধারণের জন্য কবে থেকে চালু! জেনে রাখুন
এই তিন রাত চার দিনের ভ্রমণ সম্পন্ন করে এবার ফিরতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। অন্তত ৫-৬ জন মিলে একসঙ্গে এই ট্যুরে গেলে খাওয়া-দাওয়া, গাড়ি ভাড়া, হোটেল খরচ, পারমিট এর কাগজপত্র ইত্যাদি সমস্ত কিছু নিয়ে মাথাপিছু খরচ হতে পারে প্রায় ৬৬৫০ টাকা। সব মিলিয়ে তিন রাত চার দিনের এই ট্যুর আপনার কাছে যে অত্যন্ত উপভোগ্য হয়ে উঠবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন আরও প্রতিবেদন দেখতে সঙ্গে থাকার অনুরোধ রইল। আরও তথ্য জানতে চাইলে কমেন্টে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
Written by Joyeeta Mukherjee.
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন