প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর মিটিং সম্পন্ন হল, তৈরি হল নতুন নিয়ম। 100 নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি মেধাতালিকার ওপরে ভিত্তি করেই পূজার আগে শুরু হতে পারে নিয়োগ!
প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জল্পনা কাটিয়ে ফের নিয়োগ শুরু হতে চলেছে রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে। বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বহু প্রাথমিক স্কুল গুলিতে TIC হিসেবেই সহ-শিক্ষকেরা স্কুলের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছিলেন। এবারে এই নতুন প্রক্রিয়া চালু হলে সেই সকল প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদের ঘাটতি মিটবে। তবে প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক হলে কত টাকা পাবেন অতিরিক্ত, আবেদনে সিনিয়রিটির পাশাপাশই কোন কোন বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব, কীভাবে পাবেন নম্বর, কোন কোন বিষয় গুলিতে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব, আজকের প্রতিবেদনে তা দেখে নেয়া যাক।
রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোচনা
প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে আনা হয়েছে বদল। দীর্ঘ প্রায় 5 বছর রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করার ক্ষমতা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ তথা DPSC এর হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিল রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। তবে সেক্ষেত্রে কি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নিয়োগ করা হবে, তা স্পষ্ট ছিল না। এবারে সেই সকল প্রশ্নের সমাধান সামনে এলো। ৩১ জুলাই কলকাতায় রাজ্যের সমস্ত ডিপিএসসি’র চেয়ারম্যান এবং ডিআই-দের উপস্থিতিতে পর্ষদের সভায় চূড়ান্ত হয়েছে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
পর্ষদের সিদ্ধান্ত
এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে, রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের মতো শুধুমাত্র সার্কেল ভিত্তিক সিনিয়ারিটি এর ওপরে তৈরি করা প্যানেলের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে না। এর পরিবর্তে আধিকারিকদের অনুমোদন করা শিক্ষকের স্বমূল্যায়ন, সিনিয়ারিটি এবং ইন্টারভিউর মাধ্যমে তৈরি মেধাতালিকা অনুসারে প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি যে, মোট 3 টি ধাপে এই নম্বর দেওয়া হবে। এর জন্য পৃথক পৃথক ভাবে পাস নম্বরের কথাও জানানো হয়েছে।
মোট 100 নম্বরের বাছাই প্রক্রিয়ায় 60 পেলে তবেই মেধাতালিকায় স্থান মিলবে। এক বছরের জন্যে তৈরি হবে ওয়েটিং লিস্ট সহ মেধাতালিকা। তার ভিত্তিতে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে হবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ। পর্ষদ বিস্তারিত প্রক্রিয়া জানিয়েছে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় কাউন্সিলকে। এর ভিত্তিতে খুব দ্রুত জেলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। সার্কেল স্তর থেকেই কাজ শুরু হবে। পর্ষদ এবং বিভিন্ন ডিপিএসসি সূত্রে খবর, পুজোর ছুটির আগেই ঘোষিত নতুন পদ্ধতিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যাতে চলতি শিক্ষাবর্ষেই রাজ্যজুড়ে প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা যায়।
নতুন নিয়ম অনুসারে শুধু সিনিয়রিটি নয় অন্যান্য বেশকিছু জিনিসকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অর্থাৎ সিলেকশন প্রসিডিওর অনুযায়ী প্যানেলে নাম আসতে হবে। আগের নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট DPSC তে জয়েনিং ডেট অনুযায়ী সিনিয়রিটির ভিত্তিতে প্যানেল প্রস্তুত করা হ’ত যেখানে সেই DPSC তে নিয়মিতভাবে ন্যূনতম 5 বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হত। বর্তমান নিয়মানুযায়ী সিলেকশন প্রসেস হবে 100 নম্বরের ভিত্তিতে, যেখানে কোয়ালিফাইং মার্কস 60 নম্বর!
PDF দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ধাপ 1. সিনিয়রিটি এক্সপেরিয়েন্সের ক্ষেত্রে প্রতিবছর 5 করে সর্বোচ্চ 50 নম্বরের।
ধাপ 2. Category -A: 30 নম্বর। বর্তমান চাকরীর শেষ 3 বছরের জন্য আলাদাভাবে 3 টি Self- Appraisal Report জমা দিতে হবে। প্রত্যেক বছরের জন্য নম্বর থাকবে 10 করে অর্থাৎ সেক্ষেত্রে মোট 30 নম্বর। এর মধ্যে থাকা Teaching, Learning, Evaluation সম্পর্কিত ডিউটির ঘরে (Appendix-2 ফর্ম) নিজেকে নম্বর বসাতে হবে। এগুলি পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট DI এবং SI/S -রা রিভিউ করবেন। এখানে কোয়ালিফাইং মার্কস থাকবে। অর্থাৎ প্রার্থীকে অবশ্যই 18 নম্বর পেতে হবে।
ধাপ 3. Category -B : 20 নম্বর। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বরাদ্দ থাকলে মোট 20 নম্বর। এক্ষেত্রে পড়ুয়া সম্পর্কিত সহপাঠক্রমিক কার্যকলাপ, Extension & Precessional Related Activities এর ওপরে ভিত্তি করে কিছু কলাম থাকবে। এই কলাম পূরণ করতে হবে প্রার্থীদের নিজেকেই এবং এর সাথে সাথে মার্কসও দিতে হবে। এটাও আগের মতোই রিভিউ হবে। এখানেও কোয়ালিফাইং মার্কস থাকবে 60% অর্থাৎ পেতে হবে 12 নম্বর।
জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞাপন বেরোলে করণীয়
এরপর বিজ্ঞাপন বেরোলে নির্দিষ্ট ফর্মে অর্থাৎ Appendix -1 অনুসারে নিজের DPSC তে আবেদন করতে হবে। এরপর এলিজিবল ক্যান্ডিডেটদের কমিটির সামনে ডাকা হবে। সেখানে কমপক্ষে 3 জন হাইস্কুল/কলেজ/ইউনির্ভাসিটির টিচার থাকবেন। তাদের কাছে পারফরম্যান্স অনুযায়ী A(Excellent), B(Very Good), C (Good), D(Average) গ্রেড দেওয়া হবে।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্যানেলের ভ্যালিডিটি
সব পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট DPSC মেইন ও ওয়েটিং প্যানেল তৈরি করবে যার ভ্যালিডিটি থাকবে 1 বছর। এই প্যানেল অনুযায়ী পোস্টিং দেওয়া হবে বিভিন্ন স্কুলে। প্রতিটা সার্কেল থেকে ভ্যাকেন্সি নিয়ে মোট ভ্যাকেন্সি যত, ঠিক ততজনকেই মেইন প্যানেলে রাখা হবে। মেইন প্যানেল থেকে কেউ জয়েন না করলে সেখানে ওয়েটিং থেকে শিক্ষক নেওয়া হবে। স্কুল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করা হবে।
প্রাইভেট টিউশন নিয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা! না মানলেই বিপদ, দেখুন।
আবেদন করতে হবে অফলাইনে কিন্তু পেমেন্ট করতে হবে অনলাইনেই! তবে এক্ষেত্রে কত টাকা জমা করতে হবে সেই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানা যাচ্ছে না। যেখানে কোন কারণে HT নিয়োগ করা যাচ্ছেনা বা দেরি হচ্ছে সেখানে 6 মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে স্কুলের বরিষ্ঠ শিক্ষককে TIC এর দায়িত্ব দেওয়া হবে! যদিও বর্তমানে সেই সকল বিদ্যালয়ে কেউ না কেউ এই দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের অতিরিক্ত পাওনা
বিগত 2019 সালে প্রকাশিত রোপা বা রাজ্যের সংশোধিত ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুসারে রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদের জন্যে শুধুমাত্র মাসিক 400 টাকা অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে কার্যত আগ্রহ হারান সহকারী শিক্ষকরা এবং সংগঠনগুলি। কারণ এর আগে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত শিক্ষকদের প্রাপ্তি ছিল আলাদা।
উপসংহার
প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর আগে আজকের প্রতিবেদনে নিয়ম গুলি জেনে নেবার পর এই বিষয়ে আপনার নিজস্ব মতামত আমাদের জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। শিক্ষকদের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে কতটা আগ্রহ প্রকাশ পায়, সেটাই এখন দেখার। প্রতিবেদন ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন
কর্মরত প্রধানশিক্ষক কি আবেদন করতে পারেন?
প্রাথমিক পর্যায়ের মিটিং সম্পন্ন হয়েছে। তবে জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি বেরোলে সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।