এই আর্টিকেল পড়ে আপনি ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে ভারতে এই বিষয়ে আইডিয়া পেয়ে যাবেন। ডিভোর্স, বা বিবাহবিচ্ছেদ, মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যদিও কেউই চায় না, কখনো কখনো পরিস্থিতির কারণে ডিভোর্স নিতে হয়। ভারতে ডিভোর্স প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে। অনেক মানুষই জানেন না, ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে বা কী কী খরচ হতে পারে। এই লেখায় আমরা জানবো, ভারতে ডিভোর্স প্রক্রিয়ায় কী ধরনের খরচ হতে পারে এবং কিভাবে এসব খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ভারতে মূলত দুটি ধরনের ডিভোর্স প্রক্রিয়া প্রচলিত রয়েছে:
- পারস্পরিক সম্মতির ডিভোর্স (Mutual Consent Divorce)
- একতরফা ডিভোর্স (Contested Divorce)
এই দুই ধরনের ডিভোর্সের খরচ এবং সময়ের ভিন্নতা থাকে। আমরা এখন বিস্তারিতভাবে জানবো, এই দুই ধরনের ডিভোর্সে কত টাকা খরচ হতে পারে।
ডিভোর্স দিতে কত টাকা লাগে ভারতে
পারস্পরিক সম্মতির ডিভোর্সে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নিজেদের সম্মতিতে ডিভোর্স নিতে চান। এটি তুলনামূলক সহজ এবং খরচও কম হয়। ভারতে পারস্পরিক সম্মতির ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় সাধারণত নিম্নলিখিত খরচগুলো হতে পারে:
বিষয় | খরচ |
---|---|
আইনজীবীর ফি | ₹২০,০০০ – ₹১,০০,০০০ |
কোর্ট ফি | ₹৫০০ – ₹২০০০ |
নথিপত্রের খরচ | ₹২০০ – ₹৫০০ |
অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ | ₹১০০০ – ₹৫০০০ |
এই প্রক্রিয়ায় খরচের পরিমাণ বেশিরভাগ সময়ই নির্ভর করে কেসের জটিলতা এবং আইনজীবীর উপর। সাধারণত, পারস্পরিক সম্মতির ডিভোর্স ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়। তবে, যদি কোনো আইনি জটিলতা থাকে, তাহলে সময় এবং খরচ উভয়ই বেড়ে যেতে পারে।
১. স্থানীয় আইনজীবী নিয়োগ: বড় শহরের আইনজীবীদের ফি সাধারণত বেশি হয়। তাই চেষ্টা করুন আপনার শহরের স্থানীয় আইনজীবী নিয়োগ করতে।
২. অনলাইন কোর্ট ফি পেমেন্ট: অনলাইন পেমেন্টে কোর্ট ফি কম পরতে পারে। অনেক সময় অনলাইন কোর্ট ফি দেওয়ার সুবিধা পাওয়া যায়।
একতরফা ডিভোর্স (Contested Divorce)
যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন ডিভোর্সে রাজি নয়, তখন একতরফা ডিভোর্স করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি সময় ও খরচ হয়। ভারতে একতরফা ডিভোর্সের খরচ নিম্নরূপ:
বিষয় | খরচ |
---|---|
আইনজীবীর ফি | ₹৩০,০০০ – ₹৩,০০,০০০ (একেক কেসে ভিন্ন হতে পারে) |
কোর্ট ফি | ₹৫০০ – ₹৩,০০০ |
সাক্ষীর খরচ | ₹১০০০ – ₹১০,০০০ |
অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ | ₹২০০০ – ₹১০,০০০ |
এছাড়াও, যদি কেসটি খুব জটিল হয় বা অনেকদিন ধরে চলে, তাহলে খরচ আরও বেড়ে যেতে পারে। একতরফা ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সাধারণত ২-৩ বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে যদি কেসটি খুব জটিল না হয়, তাহলে ১-২ বছরের মধ্যে ডিভোর্সের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
১. সমঝোতার চেষ্টা: ডিভোর্স প্রক্রিয়ার আগে পারিবারিক আলোচনা বা মধ্যস্থতা করে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করতে পারেন। এতে কোর্টে যাওয়ার প্রয়োজন কমতে পারে।
২. একাধিক আইনজীবীর সাথে আলোচনা: অনেক সময় একাধিক আইনজীবীর সাথে আলোচনা করলে খরচ কমানো সম্ভব হয়।
অন্যান্য খরচ যা বিবেচনা করতে হবে
ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় শুধু কোর্টের ফি এবং আইনজীবীর খরচই নয়, আরও কিছু খরচ রয়েছে যা অনেকেই এড়িয়ে যান। এই খরচগুলো সাধারণত নথিপত্র, সেবার মূল্য এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ হতে পারে। যেমন:
খরচের ধরন | সম্ভাব্য খরচ |
---|---|
নথিপত্রের অনুলিপি | ₹৫০০ – ₹২০০০ |
ট্রাভেল খরচ (কোর্টে উপস্থিত হতে) | ₹১০০০ – ₹৫০০০ |
ডকুমেন্ট প্রিন্টিং ও কপিং | ₹২০০ – ₹১০০০ |
এই ছোট ছোট খরচগুলো কেসের সময় অনুযায়ী বেড়ে যেতে পারে।
মেইনটেন্যান্স (Maintenance) এবং আলাদা থাকার খরচ
ডিভোর্সের ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় হল মেইনটেন্যান্স বা স্ত্রীর খরচের দায়। যদি স্ত্রী ডিভোর্সের পরে আর্থিকভাবে স্বামীর উপর নির্ভরশীল থাকে, তাহলে আদালত স্বামীকে মেইনটেন্যান্স দিতে নির্দেশ দিতে পারে। এই খরচের পরিমাণ নির্ভর করে স্বামীর আয়, স্ত্রীর আয়ক্ষমতা এবং তাদের জীবনযাপনের মানের উপর।
মেইনটেন্যান্সের সম্ভাব্য খরচ:
- স্ত্রীর মাসিক খরচ: স্বামীর মোট আয়ের ২০% – ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।
- সন্তানদের খরচ: সন্তানের বয়স এবং চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ হয়।
ডিভোর্সের সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত
ডিভোর্সের প্রক্রিয়ায় যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয়া উচিত:
- আইনজীবীর সাথে আলোচনা: সবকিছু পরিষ্কারভাবে আইনজীবীর সাথে আলোচনা করা উচিত। খরচ এবং সময় সম্পর্কে ধারণা নেয়া জরুরি।
- কেসের জটিলতা বুঝুন: কেসটি যদি খুব জটিল হয়, তবে সেটির জন্য আরও বেশি খরচ এবং সময় লাগতে পারে।
- সমঝোতার চেষ্টা: যতোটা সম্ভব, কোর্টের বাইরে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করা উচিত। এতে খরচ কমবে এবং সময়ও বাঁচবে।
- সকল নথিপত্র প্রস্তুত রাখা: কেসের জন্য প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র সময়মতো প্রস্তুত রাখা জরুরি। নথিপত্র না থাকলে কেসের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে এবং খরচ বেড়ে যেতে পারে।
শেষ কথা
ভারতে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদের খরচ অনেকটা নির্ভর করে মামলার জটিলতা, কোর্টের ফি এবং আইনজীবীর ফি’র উপর। পারস্পরিক সম্মতির ডিভোর্স তুলনামূলকভাবে সহজ এবং কম ব্যয়বহুল। এই ধরনের ডিভোর্সে উভয় পক্ষ একে অপরের সঙ্গে একমত হয় এবং সুতরাং, এটি দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাধারণত, এই ক্ষেত্রে খরচ কম এবং সময়ও কম লাগে।
অন্যদিকে, একতরফা ডিভোর্স অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হতে পারে। এখানে এক পক্ষ বিচ্ছেদ চায়, কিন্তু অন্য পক্ষ রাজি থাকে না। ফলস্বরূপ, মামলা দীর্ঘায়িত হয় এবং খরচও বেড়ে যায়। এছাড়া, আইনজীবীর ফি এবং কোর্টের বিভিন্ন ফি যোগ হওয়ার ফলে খরচ আরও বৃদ্ধি পায়।
ডিভোর্সের খরচ কমানোর কিছু উপায় আছে। প্রথমত, উভয় পক্ষ যদি পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারে, তাহলে খরচ অনেকটাই কমে যায়। দ্বিতীয়ত, কেসের জটিলতা কমানোর চেষ্টা করা উচিত। সহজভাবে বলতে গেলে, কোর্টে না গিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টা করলে খরচ অনেকটাই কমতে পারে।
অবশেষে, ভারতে ডিভোর্সের খরচ নির্দিষ্ট না হলেও, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এজন্য, কোর্টে যাওয়ার আগে সঠিকভাবে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। অন্যান্য দরকারি সকল তথ্য পড়তে ওয়েবসাইটের মূলপাতা ভিজিট করুন।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন