ভারত বাংলাদেশ স্থল বন্দর সম্পর্কে জানতে দেখুন এই প্রতিবেদন। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থলবন্দরগুলি দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই স্থলবন্দরগুলি দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়। চলুন এই স্থলবন্দরগুলির কিছু বিবরণ দেখি এবং কীভাবে তারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সহায়ক হচ্ছে তা জানি।
ভারত বাংলাদেশ স্থল বন্দর – কোথায় কোনটি, দেখুন
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মোট ২২টি স্থলবন্দর রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহণ ও বাণিজ্য সম্পর্ককে সহজ করেছে। এখানে প্রতিটি স্থলবন্দরের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
১. বেনাপোল স্থলবন্দর (Benapole Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বেনাপোল, যশোর।
- ভারত অংশ: পেট্রাপোল, বনগাঁ, ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ।
- এটি সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম স্থলবন্দর, যেখানে ভারত-বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাণিজ্য হয়।
২. বুড়িমারি স্থলবন্দর (Burimari Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বুড়িমারি, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট।
- ভারত অংশ: চ্যাংড়াবান্ধা, মেখলিগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গ।
- এই বন্দরটি মূলত উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলের বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩. আখাউড়া স্থলবন্দর (Akhaura Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
- ভারত অংশ: রামনগর, আগরতলা, ত্রিপুরা।
- এই বন্দরটি ত্রিপুরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ভোমরা স্থলবন্দর (Bhomra Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: ভোমরা, সাতক্ষীরা।
- ভারত অংশ: গোজাডাঙ্গা, ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ।
- পেট্রাপোলের পরে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর।
৫. নকুগাঁও স্থলবন্দর (Nokugaon Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: নালিতাবাড়ি, শেরপুর।
- ভারত অংশ: দালু, মেঘালয়।
- এই বন্দরটি মেঘালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
৬. তামাবিল স্থলবন্দর (Tamabil Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: তামাবিল, সিলেট।
- ভারত অংশ: দাউকি, শিলং, মেঘালয়।
- পর্যটন ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত।
৭. দর্শনা স্থলবন্দর (Darshana Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা।
- ভারত অংশ: গেদে, কৃষ্ণনগর, পশ্চিমবঙ্গ।
- এই স্থলবন্দরটি চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৮. বেলনি স্থলবন্দর (Beloni Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বেলনি, ফেনী।
- ভারত অংশ: বেলোনিয়া, ত্রিপুরা।
- ত্রিপুরার বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৯. গোবরাকুড়া স্থলবন্দর (Gobrakura Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ।
- ভারত অংশ: গাছুয়াপাড়া, মেঘালয়।
- মেঘালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করতে সাহায্য করে।
১০. রামগড় স্থলবন্দর (Ramgarh Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: রামগড়, খাগড়াছড়ি।
- ভারত অংশ: সাবরুম, ত্রিপুরা।
- দুই দেশের মধ্যে নতুন বাণিজ্য পথ হিসেবে উদ্ভাসিত।
১১. সোনাহাট স্থলবন্দর (Sonahat Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম।
- ভারত অংশ: সোনাহাট, ধুবরি, আসাম।
- উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১২. তেগামুখ স্থলবন্দর (Tegamukh Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বরকল, রাঙামাটি।
- ভারত অংশ: ডেমাগ্রি, মিজোরাম।
- মিজোরামের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও উন্নত করে।
১৩. চিলাহাটি স্থলবন্দর (Chilahati Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী।
- ভারত অংশ: হলদিবাড়ি, কুচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ।
- এই বন্দরটি সম্প্রতি পুনরায় চালু করা হয়েছে।
১৪. সোনা মসজিদ স্থলবন্দর (Sona Masjid Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: সোনা মসজিদ, চাপাই নবাবগঞ্জ।
- ভারত অংশ: মহদীপুর, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ।
- পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বাণিজ্যিক স্থলবন্দর।
১৫. ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর (Dhanua Kamalpur Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বকশিগঞ্জ, জামালপুর।
- ভারত অংশ: মহেন্দ্রগঞ্জ, মেঘালয়।
- মেঘালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্য।
১৬. শিউলা স্থলবন্দর (Shiulah Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: শিউলা, সিলেট।
- ভারত অংশ: সুতারকান্দি, করিমগঞ্জ, আসাম।
- সিলেট-আসামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ।
১৭. বেল্লা স্থলবন্দর (Bella Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বেল্লা, হবিগঞ্জ।
- ভারত অংশ: পাহারমুরা, ত্রিপুরা।
- ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশ সংযোগ।
১৮. হিলি স্থলবন্দর (Hili Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: হিলি, দিনাজপুর।
- ভারত অংশ: হিলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ।
- দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য।
১৯. বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর (Banglabandha Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: তেতুলিয়া, পঞ্চগড়।
- ভারত অংশ: ফুলবাড়ি, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ।
- উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান বন্দর।
২০. টেকনাফ স্থলবন্দর (Teknaf Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: টেকনাফ, কক্সবাজার।
- মায়ানমার অংশ: মংডু, মায়ানমার।
- বাংলাদেশ-মায়ানমার বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২১. বিবিরবাজার স্থলবন্দর (Bibirkabazar Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: কুমিল্লা।
- ভারত অংশ: শ্রীমন্তপুর, ত্রিপুরা।
- ত্রিপুরার সঙ্গে বাণিজ্যিক সংযোগ।
২২. বিরল স্থলবন্দর (Birol Land Port)
- বাংলাদেশ অংশ: বিরল, দিনাজপুর।
- ভারত অংশ: রাধিকাপুর, পশ্চিমবঙ্গ।
- দিনাজপুরের দ্বিতীয় প্রধান বন্দর।
প্রস্তাবিত স্থলবন্দর:
- মুজিবনগর স্থলবন্দর (Mujibnagar Land Port): মেহেরপুর ও নদিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব।
- প্রাগপুর স্থলবন্দর (Pragpur Land Port): কুষ্টিয়া ও করিমপুরের মধ্যে নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ তৈরি করবে।
নিচে ভারত-বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলির একটি বিস্তারিত টেবিল দেওয়া হলো:
ক্র. সংখ্যা | স্থলবন্দরের নাম | বাংলাদেশ অংশ | ভারত অংশ |
---|---|---|---|
১ | বেনাপোল | বেনাপোল, যশোর | পেট্রাপোল, বনগাঁ, পশ্চিমবঙ্গ |
২ | বুড়িমারি | বুড়িমারি, লালমনিরহাট | চ্যাংড়াবান্ধা, মেখলিগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গ |
৩ | আখাউড়া | আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | রামনগর, আগরতলা, ত্রিপুরা |
৪ | ভোমরা | ভোমরা, সাতক্ষীরা | গোজাডাঙ্গা, ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ |
৫ | নকুগাঁও | নালিতাবাড়ি, শেরপুর | দালু, মেঘালয় |
৬ | তামাবিল | তামাবিল, সিলেট | দাউকি, শিলং, মেঘালয় |
৭ | দর্শনা | দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা | গেদে, কৃষ্ণনগর, পশ্চিমবঙ্গ |
৮ | বেলনি | বেলনি, ফেনী | বেলোনিয়া, ত্রিপুরা |
৯ | গোবরাকুড়া | হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ | গাছুয়াপাড়া, মেঘালয় |
১০ | রামগড় | রামগড়, খাগড়াছড়ি | সাবরুম, ত্রিপুরা |
১১ | সোনাহাট | ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম | সোনাহাট, ধুবরি, আসাম |
১২ | তেগামুখ | বরকল, রাঙামাটি | ডেমাগ্রি, মিজোরাম |
১৩ | চিলাহাটি | চিলাহাটি, নীলফামারী | হলদিবাড়ি, কুচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ |
১৪ | সোনা মসজিদ | সোনা মসজিদ, চাপাই নবাবগঞ্জ | মহদীপুর, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ |
১৫ | ধানুয়া কামালপুর | বকশিগঞ্জ, জামালপুর | মহেন্দ্রগঞ্জ, মেঘালয় |
১৬ | শিউলা | শিউলা, সিলেট | সুতারকান্দি, করিমগঞ্জ, আসাম |
১৭ | বেল্লা | বেল্লা, হবিগঞ্জ | পাহারমুরা, ত্রিপুরা |
১৮ | হিলি | হিলি, দিনাজপুর | হিলি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
১৯ | বাংলাবান্ধা | তেতুলিয়া, পঞ্চগড় | ফুলবাড়ি, জলপাইগুড়ি, পশ্চিমবঙ্গ |
২০ | টেকনাফ | টেকনাফ, কক্সবাজার | মংডু, মায়ানমার |
২১ | বিবিরবাজার | কুমিল্লা | শ্রীমন্তপুর, ত্রিপুরা |
২২ | বিরল | বিরল, দিনাজপুর | রাধিকাপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
এছাড়াও দুটি প্রস্তাবিত স্থলবন্দর:
প্রস্তাবিত স্থলবন্দর | বাংলাদেশ অংশ | ভারত অংশ |
---|---|---|
মুজিবনগর | মুজিবনগর, মেহেরপুর | হৃদয়পুর, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ |
প্রাগপুর | দৌলতপুর, কুষ্টিয়া | শিকারপুর, করিমপুর, পশ্চিমবঙ্গ |
এটি ভারত-বাংলাদেশের প্রধান স্থলবন্দরগুলির তালিকা।
স্থলবন্দরগুলির ভূমিকা:
ভারত ও বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলি মূলত পণ্য আমদানি-রপ্তানি, মানুষ চলাচল, এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বন্দরগুলি দুই দেশের মধ্যে সহজ এবং দ্রুত যোগাযোগের সুযোগ প্রদান করে, যা অর্থনৈতিকভাবে দুই দেশকেই লাভবান করছে।
উপসংহার:
ভারত-বাংলাদেশ স্থলবন্দরগুলি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে এবং ভবিষ্যতে এই বন্দরগুলির মাধ্যমে আরও নতুন নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রস্তাবিত নতুন বন্দরগুলির চালু হলে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও গতি পাবে।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন