দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল – মুভি রিভিউ: বিতর্ক ও সমালোচনার আলোকে একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। The Diary of West Bengal – সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বিতর্কিত এবং আলোচিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি। পরিচালক সনোজ মিশ্র পরিচালিত এই ছবি মুক্তির আগে থেকেই ব্যাপক বিতর্ক এবং সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। ছবিটি মুক্তির আগে এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে ছবিটির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি হয় এবং প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই ছবির মুক্তিতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানায়। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের সমালোচনার অধিকার রয়েছে। ইচ্ছে হলে দেখুন, না হলে দেখবেন না।”
দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল – সিনেমা রিভিউ
নিচে ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ মুভি সম্পর্কিত প্রধান তথ্যগুলির উপর একটি টেবিল প্রদান করা হল:
বিষয় | বর্ণনা |
---|---|
ছবির নাম | দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল (The Diary of West Bengal) |
পরিচালক | সনোজ মিশ্র |
মুক্তির তারিখ | ৩০ আগস্ট, ২০২৪ |
প্রধান চরিত্র | সোহাসিনী (অর্শিন মেহতা), অতীক/প্রতীক (ইয়াজুর মারওয়া) |
প্রধান বিষয়বস্তু | সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি, ধর্মান্তরকরণ |
আদালতের রায় | কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ছবির মুক্তিতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানায়, যা ছবিটির মুক্তির অনুমোদন দেয় |
বিতর্ক | ছবির বিষয়বস্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল |
মোট দৈর্ঘ্য | ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট |
সমালোচনা | দুর্বল চিত্রনাট্য, নিম্নমানের অভিনয়, এবং অসংলগ্ন কাহিনির জন্য সমালোচনার সম্মুখীন |
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া | বিতর্কিত বিষয়বস্তু হওয়া সত্ত্বেও বক্স অফিসে ছবিটি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে |
এই টেবিলটি ছবির মূল তথ্যগুলি সংক্ষেপে এবং সুসংহতভাবে উপস্থাপন করে, যা দর্শকদের সহজে ছবিটি সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে সাহায্য করবে।
কাহিনির পটভূমি ও চরিত্র বিশ্লেষণ
‘দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ছবির গল্পটি সোহাসিনী (অর্শিন মেহতা) নামে একজন হিন্দু নারীর জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। সোহাসিনী বাংলাদেশের একটি মন্দিরের পুরোহিতের মেয়ে। বাংলাদেশের একটি গণহত্যার ঘটনায় তার বাবা-মা খুন হন, এবং এই পরিস্থিতিতে সোহাসিনী প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে এসে তার জীবনে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়, যখন তিনি ইসলামিক মৌলবাদীদের কবলে পড়েন। তারা তাকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য চাপ দিতে শুরু করে, এবং তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করে।
সোহাসিনীর এই সংগ্রাম এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের গল্পই ছবির মূল প্রতিপাদ্য। ছবির শুরুতেই সোহাসিনীর এই সংগ্রাম এবং তার জীবনের চরম সংকটগুলি ফুটে ওঠে। তবে, ছবিটির কাহিনির গভীরতা এবং চরিত্রগুলির বৈচিত্র্য দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। প্রধান চরিত্র সোহাসিনীর ভূমিকায় অর্শিন মেহতা কিছুটা চেষ্টা করেছেন, তবে তার অভিনয় পর্যাপ্ত শক্তিশালী নয়। অন্যদিকে, ইয়াজুর মারওয়া, যিনি অতীক/প্রতীক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনিও বিশেষ কিছু করতে পারেননি।
চিত্রনাট্য এবং দিকনির্দেশনা
এই সিনেমা তথা ‘দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ ছবির চিত্রনাট্য অসংলগ্নতা এবং অতিরঞ্জিত দৃশ্যে ভরা। পরিচালক সনোজ মিশ্র সিনেমার মাধ্যমে যে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট হলেও গল্পের কাঠামো এবং চরিত্রগুলির বিকাশ সেই বার্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সাংবাদিকের হঠাৎ করে অ্যাঙ্করের ভূমিকা গ্রহণ করার দৃশ্যটি অত্যন্ত অবাস্তব এবং দর্শকদের জন্য বিভ্রান্তিকর ছিল। ছবির আর্ট ডিরেকশন এবং সম্পাদনা অত্যন্ত দুর্বল, যা গল্পের ধারাবাহিকতা এবং প্রভাবকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
চিত্রনাট্যের এই সমস্ত ত্রুটিগুলি ছবির মানকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গল্পের উপস্থাপনা দর্শকদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া, ছবির মধ্যে থাকা সংলাপগুলি অপ্রাসঙ্গিক এবং দুর্বল ছিল, যা দর্শকদের মধ্যে বিরক্তির সৃষ্টি করে।
রাজনৈতিক বার্তা এবং এর প্রভাব
বাংলায় ‘দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ একটি বিশেষ রাজনৈতিক বার্তা বহন করে, যেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ এবং তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে এই প্রসঙ্গটি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হলেও, ছবির সামগ্রিক মান সেই বার্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পরিচালক সনোজ মিশ্র এই বার্তার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চিত্রনাট্য এবং চরিত্রগুলির দুর্বলতার কারণে সেই বার্তাটি সঠিকভাবে পৌঁছায়নি।
ছবিটির রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলেও, সেই বার্তাটি দর্শকদের মনে গভীর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি। বরং, ছবির দুর্বল দিকগুলি দর্শকদের মধ্যে বিরক্তি এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
অভিনয় ও চরিত্রায়ন
এই ছবির অন্যতম বড় দুর্বলতা হল এর চরিত্রায়ন এবং অভিনয়। প্রধান চরিত্র সোহাসিনীর ভূমিকায় অর্শিন মেহতা কিছুটা চেষ্টা করেছেন, তবে তার অভিনয়ে অভাব রয়েছে। তার চরিত্রটি যথেষ্ট শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলা হয়নি, যা ছবির গল্পের মূল বিষয়বস্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইয়াজুর মারওয়া, যিনি অতীক/প্রতীক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনিও বিশেষ কিছু করতে পারেননি। তার অভিনয় দর্শকদের মনে প্রয়োজনীয় আবেগ সঞ্চার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ছবির অন্যান্য চরিত্রগুলিও দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিশেষ করে, ছবির খলনায়ক চরিত্রগুলি যথেষ্ট শক্তিশালীভাবে তুলে ধরা হয়নি, যা ছবির মূল সংকটকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
হাইকোর্টের রায়: দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল সিনেমার অনুমোদন
এই ছবির মুক্তির আগে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে ছবিটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। তবে, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই ছবির মুক্তিতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং জানায় যে, “গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের সমালোচনার অধিকার রয়েছে। ইচ্ছে হলে দেখুন, না হলে দেখবেন না।” আদালতের মতে, রাজ্যের মানুষ যথেষ্ট সহনশীল এবং এই ধরনের বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করাই ভাল।
মুক্তি ও প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া -The Diary of West Bengal Release Date
ছবিটি গত ৩০ আগস্ট ২০২৪-এ মুক্তি পায়। যদিও ছবিটি কিছু স্থানে ভালো শুরু করেছিল, তবে অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে এটি দর্শকদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়। মূলত ছবির বিতর্কিত বিষয়বস্তু এবং দুর্বল চিত্রনাট্যই এই ছবির সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ছবিটি মুক্তির পরেও বিতর্ক অব্যাহত থাকে এবং সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
উপসংহার
সবমিলিয়ে, ‘দ্যা ডায়েরী অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ একটি বিতর্কিত চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিতি পেলেও, এটি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নিম্নমানের চিত্রনাট্য, দুর্বল অভিনয়, এবং অপর্যাপ্ত পরিচালনা ছবিটিকে একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এই ছবির মাধ্যমে যে রাজনৈতিক বার্তা তুলে ধরা হয়েছে, তা স্পষ্ট হলেও, ছবিটির দুর্বল দিকগুলি সেই বার্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সুতরাং, এটি সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন