ভারতের স্বাধীনতা দিবস হচ্ছে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি বিশেষ দিন, এক ঐতিহাসিক দিন যা প্রতি বছর ১৫ আগস্ট পালিত হয়। ১৯৪৭ সালের এই দিনে, ভারত ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয়েছিল। এই দিনটি ভারতীয় জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং দেশের প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস রচনা
স্বাধীনতার পটভূমি
ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস দীর্ঘ এবং বেদনাদায়ক। ১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বণিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সামরিক শক্তি ও কৌশলের মাধ্যমে ভারতের একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, ১৮৫৮ সালে ভারত শাসন আইন পাস হয়, যা কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি সংগঠিত রূপ পায়। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী কার্যকলাপ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ করে। হাজার হাজার মানুষ এই আন্দোলনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, অনেকেই কারাবাসে থেকে বা ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাধীনতার আগে ভারতের স্বাধীনতা দিবস
১৯২৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের ঘোষণা দেওয়া হয়, এবং ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে এবং এর পর থেকে এই দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
দেশভাগ এবং তার প্রভাব
স্বাধীনতার মুহূর্তটি আনন্দের হলেও, এটি দেশভাগের ব্যথা নিয়ে আসে। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। দেশভাগের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হন, এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর প্রাণহানি ঘটে। পাঞ্জাব এবং বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়, এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নতুন সীমানার দিকে পাড়ি জমান। এই সময়কার সাম্প্রদায়িক হিংসা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
উদযাপনের ধরণ – ভারতের স্বাধীনতা দিবস
প্রতি বছর ১৫ আগস্ট, ভারতের প্রধানমন্ত্রী দিল্লির লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এই অনুষ্ঠানটি দূরদর্শনের মাধ্যমে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। দেশের প্রতিটি কোণায় এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। স্কুল, কলেজ এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে পতাকা উত্তোলন, প্রভাতফেরি, কুচকাওয়াজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চরিত্রে অভিনয় করে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করে।
আপনার প্রতিবেদনটির জন্য নিচে তিনটি টেবিল তৈরি করা হলো, যা আপনি আপনার লেখায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন:
মহান ভারতে স্বাধীনতা দিবসের মূল ঘটনা ও তারিখ
তারিখ | ঘটনা |
---|---|
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট | ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে |
১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগস্ট | ভারত ও পাকিস্তান দুটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয় |
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট | জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন |
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট | দিল্লির লালকেল্লায় প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় |
ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদানকারী প্রধান ব্যক্তিত্ব
ব্যক্তিত্বের নাম | অবদান |
---|---|
মহাত্মা গান্ধী | অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন |
সুভাষচন্দ্র বসু | আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা এবং নেতাজী |
জওহরলাল নেহেরু | ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা |
ভগৎ সিং | ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতীক |
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের কার্যক্রম
উদযাপন | স্থান |
---|---|
জাতীয় পতাকা উত্তোলন | লালকেল্লা, দিল্লি |
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ | লালকেল্লা, দিল্লি |
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান | স্কুল, কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান |
প্রভাতফেরি | সারা দেশব্যাপী |
স্বাধীনতার গুরুত্ব
স্বাধীনতা দিবস শুধু একটি উদযাপনের দিন নয়; এটি আমাদের দেশপ্রেম, ঐক্য এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের স্বাধীনতা অনেক সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের ফল। হাজার হাজার বিপ্লবী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মত্যাগের ফলে আমরা আজ স্বাধীন। এই দিনটি আমাদের নতুন করে দেশের প্রতি দায়িত্ব এবং কর্তব্যের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
নিচে স্বাধীনতা দিবসে ব্যবহৃত স্লোগানগুলির সাথে তাদের রচয়িতাদের নামও যুক্ত করা হলো:
- “বন্দে মাতরম!” – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- “জয় হিন্দ!” – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
- “ইংরেজ ভারত ছাড়ো!” – মহাত্মা গান্ধী
- “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার!” – বাল গঙ্গাধর তিলক
- “ইনকিলাব জিন্দাবাদ!” – ভগৎ সিং
- “স্বরাজ একদিন আসবেই!” – লালা লাজপত রায়
- “সত্যমেব জয়তে!” – মুণ্ডক উপনিষদ (ভারতের জাতীয় শ্লোগান)
- “করো বা মরো!” – মহাত্মা গান্ধী
- “দিল্লি চলো!” – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
- “সায়মন গো ব্যাক!” – লালা লাজপত রায়
এই স্লোগানগুলি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং এখনো জাতীয় উৎসবের সময়ে গর্বের সাথে স্মরণ করা হয়।
বিশেষ উদযাপন: স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ
২০২২ সালে, ভারত স্বাধীনতার ৭৫তম বছর পূর্ণ করেছে। এই উপলক্ষে, দেশের বিভিন্ন স্থানে “স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব” উদযাপিত হয়েছে। স্কুল, কলেজ, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনতার ইতিহাস, দেশপ্রেম, এবং জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। এই উদযাপন নতুন প্রজন্মকে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছে।
উপসংহার
স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এটি শুধু একটি ছুটির দিন নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী মহান ব্যক্তিদের স্মরণ করার দিন। এই দিনটি আমাদের সকলকে একত্রিত করে এবং আমাদের দেশের জন্য আরও ভালো কিছু করার প্রেরণা জোগায়। স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের স্বাধীনতা কোনো সহজলভ্য বস্তু নয়; এটি সংগ্রামের, আত্মত্যাগের এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার ফল। সুতরাং, এই দিনটি আমাদের সকলের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, এবং আমরা সবাই মিলে এটি উদযাপন করি।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন