নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ইংরেজি নতুন বছর শুরু হওয়ার পরেই যে উৎসবের আনন্দে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষরা মেতে ওঠেন সেটি হল মকর সংক্রান্তি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এই মকর সংক্রান্তি নানা নামে নানা উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। তবে বাংলার ঘরে ঘরে এদিন চলে পিঠে পুলি তৈরির (Pitha Recipe in Bengali) প্রস্তুতি। আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা। তারপরেই মকর সংক্রান্তিতে ঘরে ঘরে তৈরি হবে নানা রকম পিঠে। নতুন গুড়ের স্বাদ আর নানা ধরনের পিঠেপুলি, এই নিয়ে ভরে উঠবে খাদ্য রসিক বাঙালির পাত। তাই মকর সংক্রান্তি আসার আগেই জেনে নিন মোট আট রকম পিঠে তৈরি করার রেসিপি।
Easy Homemade Pitha Recipe in Bengali
১) গোকুল পিঠে-
পিঠে পার্বণের দিনে অতি জনপ্রিয় একটি পিঠে হল গোকুল পিঠে। রূপ এবং স্বাদে উভয়ই অতুলনীয় এই পিঠে তৈরীর পদ্ধতি (Pitha Recipe in Bengali) দেখে নিন।
i) উপকরণ- ময়দা, সুজি, পরিমান মতো নারকেল কোরা, এক কাপ গুড়, এলাচ গুঁড়ো আধ চা চামচ, খোয়া ক্ষীর, ঘি, চিনি, পরিমাণ মতো দুধ, পরিমাণ মতো জল।
ii) রন্ধন প্রণালী- প্রথমে একটি নন স্টিক প্যান নিয়ে তাতে খোয়া ক্ষীর, নারকেল কোরা, গুড়, এলাচ গুঁড়ো, ময়দা, সুজি, দুধ, চিনি ও পরিমাণ মতো জল দিয়ে ভালো করে নেড়ে এবং সব উপকরণ গুলি মিশিয়ে একটি মন্ড তৈরি করে নিতে হবে। এরপর এই মণ্ডটি কড়াই থেকে নামিয়ে নিয়ে হাতের তালুতে একটু ঘি মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর মন্ড গুলিকে নিয়ে নিজের পছন্দ মতো গোল বা চ্যাপ্টা আকৃতির বল তৈরি করতে হবে।
এরপর ঘি দিয়ে বল গুলিকে ভালো করে ভেজে নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে এই মন্ড গুলিকে একটু লালচে করেই ভেজে তারপর কড়াই থেকে তুলে নিতে হবে। ভাজার পর এগুলিকে চিনির রসে অন্তত ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর চিনির রস থেকে এগুলিকে তুলে নিলেই গোকুল পিঠে খাওয়ার জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে যাবে।
২) দুধপুলি-
পৌষ পার্বণের দিন বাংলার ঘরে ঘরে যে পিঠেটি অবশ্যই বানানো হয় সেটি হলো দুধ পুলি। অতি জনপ্রিয় এবং অসাধারণ স্বাদ যুক্ত দুধপুলির উপকরণ এবং রন্ধন প্রক্রিয়া গুলি জেনে নিন।
i) উপকরণ- পরিমাণ মত আতপ চালের গুঁড়ো, নারকেল কোরা, ঘন দুধ, গুড়, কাজু বাদাম, আধ চা চামচ ছোট এলাচ গুঁড়ো, পরিমাণ মতো জল।
ii) রন্ধন প্রণালী- দুধ পুলি তৈরির জন্য প্রথমেই দুধে চিনি দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই ফোটানো ঘন দুধ ঠান্ডা করে তাতে গুড়ের পাটালি মিশিয়ে নিতে হবে। তবে এই পিঠেতে পাটালি না মিশিয়ে শুধু চিনি দিয়েও করা যেতে পারে। এরপর একটি পাত্রে নারকেল কোরা, গুড়, কাজু বাদাম এবং অল্প পরিমাণ এলাচের গুঁড়ো মাঝারি আঁচে ভাল করে নেড়ে একটি পুর তৈরি করতে হবে।
পুর তৈরি করার সময় ঠিক মতো পাক দিয়ে সেটি শুকনো করে নিতে হবে। এরপর আতপ চালের সঙ্গে পরিমাণ মতো নুন ও গরম জল দিয়ে মিশ্রণটিকে মাখিয়ে মন্ড তৈরি করতে হবে। এরপর মোমোর মত ছোটো ছোটো আকৃতি করে তার ভিতর নারকেলের পুর দিয়ে ভাপিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর সেদ্ধ হয়ে যাওয়া পুলি গুলিকে ফোটানো ঘন দুধের মধ্যে ফেলে পরিবেশন করুন দুধপুলি।
পিঠা তৈরির আরো কিছু সহজ উপায়
৩) ক্ষীরপুলি-
দুধপুলির মতো ক্ষীরপুলিও অতি জনপ্রিয় একটি রেসিপি। দেখে নিন ক্ষীরপুলি তৈরির পদ্ধতি।
i) উপকরণ- আতপ চালের গুঁড়ো, ঘন দুধ, খোয়া ক্ষীর, গুড়, আধ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, নুন এবং পরিমাণ মতো জল।
ii) রন্ধন প্রণালী- দুধ পুলির মতো পদ্ধতিতেই তৈরি করতে হবে এই পিঠে। দুধে অল্প পরিমাণ চিনি ও খোয়া ক্ষীর দিয়ে ঘন করে ফুটিয়ে নিতে হবে। দুধ ঘন হয়ে এলে তাতে ২ কাপ গুড় ঢেলে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে খোয়া ক্ষীর, গুড়, এবং অল্প পরিমাণ এলাচের গুঁড়ো মাঝারি আঁচে ভাল করে নেড়ে পুরের মতো পাক দিয়ে শুকনো করে নিতে হবে।
এরপর দুধপুলির মতো একই পদ্ধতিতে পুলি তৈরি করে তার ভেতর ক্ষীরের পুর দিয়ে ভাপিয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এই পিঠে আবার সাদা তেলে ভেজে নেওয়াও যেতে পারে। সেদ্ধ বা ভাজা হয়ে গেলে আগে থেকে ফুটিয়ে রাখা ঘন দুধের মধ্যে পুলিকে ফেলে দিতে হবে। এভাবে ১০-১৫ মিনিট চাপা দিয়ে রাখলেই একেবারে প্রস্তুত ক্ষীরপুলি।
৪) মালপোয়া-
মিষ্টি প্রেমী মানুষদের কাছে মালপোয়া সারা বছরই অত্যন্ত জনপ্রিয়। মকর সংক্রান্তির দিনও তৈরি করে নিতে পারেন এই মালপোয়া।
i) উপকরণ- ময়দা, সুজি, চিনি, দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, এলাচ গুঁড়ো, গোটা মৌরি, জল ও সাদা তেল।
ii) রন্ধন প্রণালী- প্রথমে ময়দা, সুজি, মৌরি, এলাচের গুঁড়ো, কনডেন্সড মিল্ক ও ঘন দুধ দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করে নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে মালপোয়া তৈরির জন্য প্রস্তুত এই ব্যাটারটি যেন খুব বেশি পাতলা বা খুব ঘন না হয়।
এরপর ৩০ মিনিট এই মিশ্রণটিকে ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে এবং চিনির সিরা বানিয়ে নিতে হবে। কড়াইতে সাদা তেল গরম করে ব্যাটারটি একটি ছোট হাতার সাহায্যে এক হাতা করে গরম তেলে দিয়ে দুই পিঠ ভালো করে ভেজে নিতে হবে। এর পর ভাজা মালপোয়া চিনির সিরার মধ্যে দিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিলেই পরিবেশন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে মালপোয়া।
৫) তেলে ভাজা পিঠে-
অত্যন্ত সুস্বাদু এই তেলে ভাজা পিঠেও মকর সংক্রান্তির দিন তৈরি করার জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। জেনে নিন এই রেসিপি (Pitha Recipe in Bengali)।
i) উপকরণ- আতপ বা গোবিন্দভোগ চালের গুঁড়ো, ময়দা, দুধ, নারকেল কোরা, সুজি, পাকা কলা, চিনি, খেজুরের গুড়, নুন, ভাজার জন্য সাদা তেল।
ii) রন্ধন প্রণালী- প্রথমেই চালের গুঁড়ো একটু চেলে নিয়ে তার সাথে পরিমাণ মতো ময়দা, সুজি, দুধ, নারকেল কোরা, পাকা কলা, চিনি, দুই কাপ খেজুরের গুড় এবং পরিমাণ মত নুন দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে এবং মিশ্রণটির একটি ঘন ব্যাটার তৈরি করতে হবে।
এরপর কড়াইতে তেল গরম করে একটি ছোট হাতার সাহায্যে এক হাতা করে বা নিজের হাতে ছোট ছোট ব্যাটার নিয়ে তেলে দিতে হবে। মাঝারি আঁচে সেটি লাল করে দুই দিক ভালো করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মকর সংক্রান্তির তেলে ভাজা পিঠে।
৬) রাঙা আলুর পান্তুয়া-
এই পান্তয়াটিও স্বাদে অতুলনীয়। দেখে নিন এটি তৈরির পদ্ধতি।
i) উপকরণ- রাঙা আলু, ময়দা, চিনি, ক্ষীর বা নারকেল কোরা, নুন ও সাদা তেল।
ii) রন্ধন প্রণালী- প্রথমেই প্রেসার কুকারে রাঙা আলুকে সিদ্ধ করে সেটি ভালো করে চটকে নিয়ে তার সঙ্গে পরিমাণ মতো ময়দা ও চিনি মিশিয়ে মেখে নিতে হবে। রুটি বা লুচির জন্য প্রস্তুত করা আটার মিশ্রণের মতো করেই এই মিশ্রণটিকে প্রস্তুত করতে হবে।
এরপর ছোট ছোট লেচি করে সেই লেচিতে নিজের পছন্দ অনুসারে ক্ষীর, নারকেল বা চিনির পুর ভরে নিতে হবে। এরপর এই পুর ভরা লেচিকে গরম তেলে ভেজে ১০-১৫ মিনিট চিনির রসে ডুবিয়ে রাখলেই তৈরি রাঙা আলুর পান্তুয়া।
৭) নলেন গুড়ের পায়েস-
সারা বছরই বাঙালির কাছে পায়েসের জনপ্রিয়তা থাকে তুঙ্গে। তবে শীতকালে পায়েসের মধ্যে নতুন গুড়ের স্বাদ স্বাভাবিক ভাবেই পায়েস কে আরো লোভনীয় করে তোলে। দেখে নিন গুড়ের পায়েস রান্নার পদ্ধতি (Pitha Recipe in Bengali)।
i) উপকরণ- বাসমতি চাল, দুধ, এক কাপ কনডেন্সড মিল্ক, ক্ষীর, নলেন গুড়, চিনি, গোটা এলাচ, কাজু বাদাম, কিসমিস।
ii) রন্ধন প্রণালী- প্রথমেই দুধকে ফুটিয়ে নিয়ে এর মধ্যে পরিমাণ মতো ক্ষীর, কনডেন্সড মিল্ক ও চিনি মিশিয়ে ভাল করে নাড়তে হবে। দুধ ঘন হয়ে এলে তাতে পরিমাণ মতো বাসমতি চাল দিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিমাণটি হবে দুধের পরিমাণের একভাগের অর্ধেক পরিমাণ চাল।
চাল সিদ্ধ হয়ে এলে নলেন গুড়, কাজু বাদাম, কিসমিস ও গোটা এলাচ দিয়ে দিতে হবে। চিনি দিতে হবে পরিমাণ মতো। এরপর আরো ১৫ মিনিট নেড়ে ঘন হয়ে এলে তা নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তাহলেই পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে যাবে নলেন গুড়ের পায়েস।
৮) পাটিসাপটা-
পৌষ পার্বণের জন্য পাটিসাপটা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। অনেক রকম পুর দিয়ে এটি তৈরি করা যায়।
i) উপকরণ- চালের গোলা বা রুটির জন্য পরিমাণ মত চালের গুঁড়ো, ময়দা, জল, লবণ ও সাদা তেল। এর পুর বিভিন্নভাবে তৈরি করা যায়। নলেন গুড়ের পাটিসাপটা হলে পুর হিসেবে লাগবে পরিমাণ মত নারকেল বাটা, এক কাপ দুধ, অল্প পরিমাণ খোয়া ক্ষীর ও এক বাটি নলেন গুড়।
নারকেলের পুরের পাটিসাপটা হলে পুরের জন্য লাগবে মিহি করে বাটা নারকেল, খেজুরের গুড়, অল্প পরিমাণ চিনি, ২-৩ টুকরো গোটা এলাচ। আবার ক্ষীর পাটিসাপটার পুরের উপকরণ হিসেবে লাগবে পরিমাণ মত খোয়া ক্ষীর, কনডেন্ট মিল্ক হাফ কাপ বা দুধ, খেজুরের গুড়, দুই টেবিল চামচ সুজি, কাজু বাদাম পেস্ট, কিসমিস, চিনি।
ii) রন্ধন প্রণালী- নিজের পছন্দমত উপকরণ দিয়ে যে পুর টি তৈরি (Pitha Recipe in Bengali) করতে চান সেটি আগে কড়াই তে নেড়ে শুকনো করে পাক করে নিতে হবে। এরপর চালের গুঁড়োর সাথে অল্প পরিমাণ ময়দা, একটু লবণ ও পরিমাণ মত জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে এক টেবিল চামচ তেল ঢেলে গরম করে নিন।
এবার মিশ্রিত চালের গুঁড়ো পরিমাণ মত নিয়ে ফ্রাইপ্যানে ঢেলে দিন এবং দুদিকেই রুটির মত অল্প ফ্রাই করে নিতে হবে। এটি ঠিকমতো প্রায়ই হয়ে গেলে আগে থেকে বানিয়ে রাখা পুর এর উপর লম্বা করে দিয়ে রুটি টি রোল করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে পাটিসাপটা। এমন আরও আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
Written by Joyeeta Mukherjee.
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন
The quantity of all recipe is too good, really pleased..