নিজস্ব প্রতিবেদনঃ রাজ্যের সরকারি কর্মীদের একাংশ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ (DA Case in SC) এর দাবী সহ পঞ্চম বেতন কমিশনের বকেয়া ডিএ নিয়ে বেশ সক্রিয়। আন্দোলন, অনশন থেকে শুরু করে কর্মবিরতির মতো বিরাট পদক্ষেপ এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অপরদিকে রাজ্য সরকার SLP দায়ের করেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে। আজই ছিল শুনানী। চলুন, জেনে নেয়া যাক আজকের আপডেট।
Today’s Update on DA Case in SC
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্যে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মত সমান হারে ডিএ -র সুবিধা লাভ করার জন্য রাজ্য সরকারি কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি এবং বিক্ষোভের রেশ পৌঁছে গেছে আদালতের দোরগোড়াতেও।
সোমবার অর্থাৎ আজ সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ সংক্রান্ত মামলার (DA Case in SC) শুনানির দিন ছিল। রাজ্য সরকারি কর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের জেরে ২০২৩ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে রাজ্যের কর্মীদের বড়দিনের উপহার স্বরূপ চার শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু এতে একেবারেই সন্তুষ্ট হননি আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীরা। তাই তাদের আন্দোলন সমান হারে জারি ছিল। এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে বিচারপতি হৃষিকেশ রায় এবং বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানির দিন ছিল আজই।
গত ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে শীর্ষ আদালতে চলছে এই মামলা। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্য সরকার এর দাখিল করা এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেই ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ তথা SLP দাখিল করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্ট -এ। তারপর থেকে একাধিক বার শীর্ষ আদালতে সেই মামলা উঠেছে।
কিন্তু বারবার বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে গেছে মামলার শুনানি। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার সময় বিস্তারিত ভাবে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখনও পিছিয়ে যায় শুনানি। অবশেষে আজ তথা ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ তারিখ সোমবার সেই শুনানীর দিন ছিল, বিস্তারিত ভাবে এই মামলার শুনানি হবে বলে আশা করেছিলেন বিভিন্ন মহল।
ডিএ মামলার কোর্ট এবং সিরিয়াল নাম্বার
এই প্রসঙ্গে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন যে, “আমরা আশা রাখছি এবার মামলাটি পূর্ণাঙ্গভাবে শুনবেন বিচারপতিরা।” একাধিকবার এই মামলা পিছিয়ে যাওয়ায় কিছুটা হতাশা তৈরি হয়েছে আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে। ইতিমধ্যে এই মামলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অফিস রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। যারা গেছে ৬ নম্বর কোর্টে আইটেম নম্বর ৬০ এ শুনানি শুরু হবার কথা ছিল এই মামলার।
আজ এই মামলার শুনানি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গতকাল যে অফিস রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল তাতে এই মামলার সমস্ত দিক গুলি বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বার বার এই মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলেও এবারের অফিস রিপোর্ট এর বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী কিছুটা ইতিবাচকতার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
গত ২০২৩ সালের ১২ই জুলাই যখন এই মামলাটি এক্সটেনসিভ কন্সিডারেশন এর জন্য এই মামলাটি নির্ধারিত হয় সেখানে ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স অর্থাৎ ডিএ -র পাশাপাশি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের অন্যান্য বিভিন্ন দাবির কথাও জানানো হয়েছে। সেই শুনানিটি প্রথম বার হয়েছিল ৩ নভেম্বর ২০২৩ সালে।
সেই দিন মামলা শুনানির পর জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুনরায় বিবেচনা করার জন্য এই মামলাটিকে ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে এই মামলাটিকে নির্দিষ্ট করা হয় তবে কি কারণে এটিকে নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা জাজমেন্ট কপিতে সে সময় পরিষ্কার ভাবে জানানো হয়নি।
তবে পয়লা ডিসেম্বর বিচারপতিরা জানিয়েছিলেন তারা এই মামলাটি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোন অর্ডার পাস করেননি তখন ও পর্যন্ত। এরই মধ্যে আবার আইনজীবী রউফ রহিম সিনিয়র অ্যাডভোকেট হওয়ার কারণে তার জায়গায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন আইনজীবী শেখর কুমার। তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করে ওকালত নামাও জমা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারী সরকারি কর্মীরা আশা করেছিলেন যে, আজ এই মামলায় অবশ্যই ইতিবাচক কিছু দিকের উন্মোচন ঘটবে। মামলার ইতিহাস থেকে জানা যায় ২০১৬ সাল থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সুবিধার্থে মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলা শুরু হয়েছে। সে সময় আন্দোলনকারী রাজ্য সরকারি কর্মীরা বকেয়া ডিএ -র দাবিতে প্রাথমিক ভাবে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইনবুনাল বা স্যাট এ মামলা দায়ের করেছিলেন।
কিন্তু সেই মামলার রায় দানের পর তারা ধাক্কা খেয়েছিলেন। তারপর হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। এর পর থেকে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিএ মামলায় জিতেছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাই এবারও তারা আশা করছেন আজ শীর্ষ আদালতে মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত বিস্তারিত শুনানিতে তারা তাদের পক্ষে ইতিবাচক রায় শুনতে পাবেন।
আজকের ডিএ মামলার সুপ্রিমকোর্টে আপডেট
তালিকার ৬০ নম্বরে ছিল আজকের ডিএ মামলাটি। তবে আজ ঘটে গেল অন্য ঘটনা! ৪০ নম্বর মামলার পর সময় অভাবে আর কোনও মামলা ওঠেনি। ৪০ নম্বর মামলা যখন ওঠে তখন বিকেল চারটে। তারপর আর কোনও মামলা নেননি বিচারপতিরা। সুতরাং মামলা যে জায়গায় ছিল, সেই জায়গাতেই থাকল।
এই মামলা কি তবে আগামীকাল উঠবে নাকি মিলবে নতুন কোন তারিখ! কী নিয়ম রয়েছে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে ডিএ মামলার পরবর্তী তারিখের বিষয়ে, চলুন দেখে নেয়া যাক।
আইনজীবীদের বক্তব্য অনুসারে, এক্ষেত্রে সাধারণত নিয়ম হল যে, কোনও মামলা সুপ্রিম কোর্টের সময়ের অভাবে না উঠলে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে তার তারিখ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি তাই হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শুনানি হতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট হয়তো খুব শিগগিরই তারিখ দেবে।
এই ডিএ মামলা প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীল মহাশয় বলেন যে, ‘সময়ের অভাবে আজ মামলা ওঠেনি। লাখ লাখ সরকারি কর্মচারী এই মামলার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। রাজ্য সরকার হাইকোর্ট ও স্যাটের নির্দেশ না মেনে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।’
তিনি আরও জানান যে, ‘তাদের লক্ষ্য, সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা। সেই জন্য SLP দায়ের করেছে। এর আগে তারা মামলার তারিখ পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আজ যদিও মামলাটি ওঠেনি সুপ্রিম কোর্টের সময় অভাবে। তবে আমরা আশাবাদী, রাজ্য সরকারের SLP খারিজ করবে সুপ্রিম কোর্ট। সরকারকে প্রাপ্য বকেয়া মেটাতেই হবে।’
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের তরফে শ্যামল মিত্র বলেন যে, ‘আমরা তো বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে। রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ এই ঝুলছে। অথচ মামলাটা উঠলই না। আমরা তো বলারই সুযোগ পাচ্ছি না সুপ্রিম কোর্টকে। এটা হতাশার।’
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের কেন্দ্রের সমতুল হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কোর্টের তরফে। তবে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। SLP দায়ের করে। ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর মামলা দায়ের হয় শীর্ষ আদালতে। প্রথম শুনানি হয় ২৮ নভেম্বর। তারপর থেকে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। শুনানি একাধিকবার পিছিয়েছে। আজ মামলা ওঠার সময় পেল না।
আরও দেখুন, একটি ছুটি নষ্ট হলেও ফের টানা ২ দিন ছুটি রাজ্যে! কাদের কবে, দেখুন
এবারে পরবর্তী তারিখ কী মিলবে খুব তাড়াতাড়ি, নাকি হবে আরও দেরি! কবে হতে পারে এই মামলার শুনানি – এই প্রসঙ্গে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাদের জানাতে পারেন কমেন্টে। এমন আরও আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন। সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
Written by Joyeeta Mukherjee.
এই মাত্র পাওয়া গেল আপডেট। পরবর্তী শুনানির সম্ভাব্য তারিখ দেখুন।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন