আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রচনা ও জীবনী

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি ২ আগস্ট, ১৮৬১ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাড়ুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় ছিলেন একটি সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারের সদস্য এবং মাতা ভুবনমোহিনী দেবী ছিলেন একজন বিদুষী নারী। তাঁর পরিবারে শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিবেশ ছিল প্রখর, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছিল। শিক্ষা সংক্রান্ত এই প্রতিবেদন দেখে নেয়া যাক।

Contents hide
1 আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রচনা

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রচনা

বাল্যকাল ও পরিবার

বাল্যকাল কাটে রাড়ুলি গ্রামে। পিতার কাছ থেকে তিনি প্রথম শিক্ষা লাভ করেন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় চাইতেন তিনি সুশিক্ষিত হয়ে উঠুক এবং সমাজে বড় অবদান রাখুক। প্রাথমিক শিক্ষার পর তিনি কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুলে ভর্তি হন।

শিক্ষা জীবন

মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পরবর্তীতে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এডিনবার্গে তার সময়কাল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানেই তিনি রসায়নের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি করেন এবং নিজেকে একজন গবেষক হিসেবে প্রমাণ করেন।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় দেশের জন্য অবদান

ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ১৮৯২ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বেঙ্গল কেমিক্যালের মাধ্যমে তিনি দেশের জন্য নতুন নতুন ঔষধ ও রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করেন, যা দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতিতে বড় ভূমিকা পালন করে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

রসায়নে অবদান

তিনি রসায়ন শাস্ত্রে অসংখ্য অবদান রেখেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো পারদ নাইট্রেট (Mercurous Nitrate)। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তিনি আরও অনেক গবেষণা করেছেন এবং তার গবেষণার ফলাফলগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় লেখা বই

তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন, যা তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। তার কিছু উল্লেখযোগ্য বই হলো:

  • “A History of Hindu Chemistry”: এই বইতে তিনি প্রাচীন ভারতের রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।
  • “Life and Experience of a Bengali Chemist”: এটি তার আত্মজীবনী, যেখানে তিনি তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

প্রাপ্তি ও সম্মান

তিনি তার জীবদ্দশায় বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। তার কিছু উল্লেখযোগ্য সম্মাননা হলো:

  • নাইটহুড: ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুড প্রদান করে।
  • ফেলো অফ দ্য রয়াল সোসাইটি: তাকে রয়াল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি’র ফেলো নির্বাচিত করা হয়।
  • ডি.এস.সি (ডক্টর অফ সায়েন্স): এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে।

সমসাময়িক অন্যান্য মহান ব্যক্তিত্বের সাথে ঘটনা

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সমসাময়িক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমুখ। তিনি তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন এবং বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, এবং তারা একে অপরকে সম্মান করতেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়: জীবনী সংক্রান্ত তথ্য

তথ্য শিরোনামবিবরণ
পূর্ণ নামআচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
জন্ম তারিখ২ আগস্ট, ১৮৬১
মৃত্যু তারিখ১৬ জুন, ১৯৪৪
জন্ম স্থানরাড়ুলি গ্রাম, খুলনা, বাংলাদেশ
পিতার নামহরিশ্চন্দ্র রায়
মাতার নামভুবনমোহিনী দেবী
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ড
প্রধান অবদানপারদ নাইট্রেট (Mercurous Nitrate) আবিষ্কার
প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানবেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস
প্রকাশিত গ্রন্থ“A History of Hindu Chemistry”
“Life and Experience of a Bengali Chemist”
প্রাপ্ত সম্মাননাইটহুড
ফেলো অফ দ্য রয়াল সোসাইটি
ডি.এস.সি (ডক্টর অফ সায়েন্স)
সমসাময়িক ব্যক্তিত্বরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জগদীশ চন্দ্র বসু
বিশেষ পণ্যস্বদেশী বিস্কুট
বিশেষ উক্তি“সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য।”
“প্রকৃতি আমাদের শিক্ষক, আমরা তার ছাত্র।”

স্বদেশী বিস্কুট

বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করার সময় তিনি বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতেন। একটি বিশেষ পণ্য ছিল “স্বদেশী বিস্কুট”। এই বিস্কুট তৈরি করা হয়েছিল স্বদেশী আন্দোলনের অংশ হিসেবে, যা বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারকে উৎসাহিত করত।

গুরুত্বপূর্ণ উক্তি

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উক্তি করেছেন, যা আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। তার কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি হলো:

  • “সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য।”
  • “প্রকৃতি আমাদের শিক্ষক, আমরা তার ছাত্র।”
  • “শিক্ষা হল জীবনের প্রদীপ, যা আমাদের পথ দেখায়।”

স্মরণীয় কেন

সর্বোপরি ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক হিসেবে স্মরণীয়। তার অবদান শুধু রসায়ন শাস্ত্রে নয়, স্বদেশী আন্দোলনেও। তিনি ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করেছিলেন। তার গবেষণা ও আবিষ্কারগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে এবং তার লেখা বইগুলি আজও রসায়ন শিক্ষার্থীদের জন্য মুল্যবান সম্পদ।

প্রশ্নের উত্তর

আচার্য কে ছিলেন?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় রসায়নবিদ এবং ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক। তিনি ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক কে?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ভারতীয় রসায়ন শাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত।

কে বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন কেন?

তিনি ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে দেশীয় ঔষধ উৎপাদন ও ব্যবসায়িক স্বাধীনতা লাভের উদ্দেশ্যে বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন।

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু এর জীবনী ও রচনা

প্রফুল্ল চন্দ্র কি আবিষ্কার করেন?

তিনি পারদ নাইট্রেট (Mercurous Nitrate) আবিষ্কার করেন, যা রসায়ন শাস্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

ভারতীয় রসায়নের জনক কে?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ভারতীয় রসায়নের জনক।

পারদ নাইট্রেট কে আবিষ্কার করেন?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় পারদ নাইট্রেট আবিষ্কার করেন।

রসায়নের প্রথম জনক কে?

রসায়নের প্রথম জনক হিসেবে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় পরিচিত।

বিজ্ঞানের জনক কে?

গ্যালিলিও গ্যালিলি বিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন কোন বিখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বেঙ্গল কেমিক্যালস প্রতিষ্ঠা করেন।

পারদ নাইট্রেট কোথা থেকে আসে?

এই পারদ নাইট্রেট রসায়ন পরীক্ষাগারে তৈরি হয় এবং এটি বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত হয়।

পারদ ১ নাইট্রেট কি দ্রবণীয়?

না, পারদ ১ নাইট্রেট জল বা সাধারণ দ্রবণে দ্রবণীয় নয়।

ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি কে প্রতিষ্ঠা করেন?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ভারতের প্রথম ঔষধ কোম্পানি বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

বাংলার রসায়নের প্রবর্তক কে?

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় বাংলার রসায়নের প্রবর্তক হিসেবে পরিচিত।

রসায়নে প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান?

প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রধান অবদান হলো পারদ নাইট্রেট আবিষ্কার এবং বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা। এছাড়া তিনি রসায়ন শাস্ত্রের উপর বিভিন্ন গবেষণা করেছেন এবং তার গবেষণার ফলাফলগুলি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসিত হয়েছে।

Post Disclaimers

'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)

আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন

*ফেসবুক পেজ - Join Here
*হোয়াটস্যাপ চ্যানেল - Follow Us
*টেলিগ্রাম চ্যানেল - Join Here
*কু অ্যাপ - Like Us
*ট্যুইটার - Follow Us

হ্যালো প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমরা একটি দল হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করছি আপনাদের জন্য শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে বিশ্বাসযোগ্য এবং মূল্যবান কন্টেন্ট সরবরাহ করতে। আমরা শিক্ষা, সরকারি স্কিম, সরকারি কর্মচারী, প্রযুক্তি, টেলিকম, দৈনিক আপডেট, আর্থিক বিষয়, ব্যবসার ধারণা, বৃত্তি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। প্রতিটি ব্লগ পোস্টের জন্য একটি মূল্যবান মন্তব্য করতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। কোনো প্রয়োজনে আমাদের wspbengal@gmail.com ঠিকানায় লিখুন।

Leave a Comment

Home
চ্যানেল
জয়েন গ্রুপ
ফলো পেজ
নিউজ
চ্যানেল