নিজস্ব প্রতিবেদনঃ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) ১২৭তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন। উক্ত দিনে পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্কুল, কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে ছুটি। দেশভক্ত মহান ব্যক্তিত্ব নেতাজী সম্পর্কে জীবনী রইল আজকের এই প্রতিবেদনে।
Biography of Netaji Subhash Chandra Bose
সুচনাঃ-
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশদের হাতে সিরাজউদ্দৌলার পতন এবং মৃত্যুর পর স্বাধীন এবং ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। এই সময়কালের পর থেকেই ভারতবর্ষে প্রভাব বাড়তে থাকে ব্রিটিশদের। ক্রমে ভারতবর্ষের উপর একছত্র ক্ষমতা বিস্তার করে ব্রিটিশরা।
ব্রিটিশ শাসনঃ-
শুরু হয় ভারতবাসীদের উপর অত্যাচার, বিভিন্ন আইন কানুন তৈরি করে ভারতবাসীদের দমন করে রাখার চেষ্টা। অবশেষে ব্রিটিশদের কঠিন শৃঙ্খল থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার জন্য জীবন মরণ সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেছিলেন কয়েকজন ভারতীয়। তাদের দীর্ঘ লড়াই এবং প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ একসময় ইংরেজরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
নেতাজীর জন্মঃ-
আমাদের দেশের এইসব বীর বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে জানুয়ারি কটক সরকারি আদালতের বিখ্যাত আইনজীবী জানকীনাথ বসুর ঘরে জন্ম হয় সুভাষচন্দ্র বসুর। তাদের পৈত্রিক বাসভূমি ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কোদালিয়া গ্রামে।
শিক্ষা জীবনঃ-
ছোটবেলা থেকেই ব্রিটিশদের নানারকম অত্যাচারী মনোভাব দেখে ধীরে ধীরে ইংরেজদের প্রতি তীব্র বিতিষ্ণা নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন সুভাষ। ছোটবেলায় কটকের একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা শুরু হয় তার।
উচ্চ শিক্ষাঃ-
ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তিনি। এই কলেজে ওটেন নামক ইংরেজ সাহেবের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করার জন্য কলেজ থেকে বিতাড়িত হতে হয় তাকে। কিন্তু সেই সময় থেকে আরো তীব্র ভাবে তার মনের মধ্যে বিকাশ লাভ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশ মুক্ত স্বাধীন ভারত গড়ার স্বপ্ন।
সিভিল সার্ভিস পরিক্ষাঃ-
এরই মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো অগ্রসর হন তিনি। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বহু ইংরেজকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। তবে সিভিল সার্ভিস পাশ করার পরেও ইংরেজদের অধীনস্থ হয়ে চাকরি না করে তিনি যোগ দেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। শুরু করেন তার বৈপ্লবিক কর্মসূচি।
স্বাধীনতার নানা আন্দলনঃ-
অসহযোগ আন্দোলনের সময়, জাতীয় কংগ্রেসের যোগদান করেন সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের বাম গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সমর্থনে তিনি সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে গান্ধীজি মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সিতারামাইয়াকে ২০৩ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সভাপতির নির্বাচিত হন তিনি।
গান্ধীজির সাথে মতবিরোধঃ-
তবে এ সময় কর্ম সমিতি গঠনের বিষয়ে গান্ধীজীর সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুর মতবিরোধ শুরু হয়। এবং এই মতবিরোধের ফলস্বরূপ ১১ জুলাই সুভাষচন্দ্র বসুকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পরেও তার বিপ্লবী মনোভাব একেবারেই থেমে থাকেনি। ১৯৩৯ সালে ৩ মে তিনি গঠন করেন ফরোয়ার্ড ব্লক।
ফরোয়ার্ড ব্লক গথনঃ-
১৯৪০ সালে নাগপুরে ফরওয়ার্ড ব্লক-এর প্রথম সর্বভারতীয় বৈঠক সম্পন্ন হয়। এখন থেকেও সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তীব্রভাবে গড়ে তোলার জন্য গোটা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য প্রকাশ করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এরই মধ্যে ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সংঘটিত হওয়া দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় কিছুদিন তাকে গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়।
স্বাধীন ভারত গড়ার প্রতিজ্ঞাঃ-
কিন্তু স্বাধীন ভারত গড়ার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই ব্রিটিশ পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে ১৯৪১ সালে গৃহবন্ধী অবস্থা থেকে ছদ্মবেশ ধারণ করে আফগানিস্তানের কাবুল হয়ে জার্মানিতে যান এবং জার্মানির বার্লিনে একনায়কতন্ত্রের প্রতীক হিটলারের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য প্রার্থনা করেন। যদিও এখানে তার উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় ডুবো জাহাজে করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসেন জাপানে।
জাপান পাড়ি দেওয়াঃ-
জাপান সরকারের সাহায্যে এবং রাসবিহারী বসু সহায়তায় সুভাষচন্দ্র বসু গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। সেই বাহিনীর নেতা হোন তিনি এবং পরিচিতি পান নেতাজি নামে। এরপর সেই বাহিনী নিয়ে তিনি ভারতবর্ষের বাইরে থেকে ভারতে অবস্থানকারী ইংরেজদের আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ব্রহ্মদেশ, ইম্ফল এবং কোহিমায় জাপানি বাহিনীর সাহায্যে আজাদ হিন্দ বাহিনী যুদ্ধ অভিযান চালায়।
আজাদ হিন্দ ফউজঃ-
যদিও ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্রহ্মদেশ অভিযান চালিয়ে তারা ব্যর্থ হন। এই যুদ্ধের শেষে বাহিনীর একটি বৃহত্তর অংশকে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে তাদের কারোর বিচার হয় এমনকি ফাঁসিও হয়। ঐতিহাসিকদের মতে ১৯৪৪ সালের ১৮ই আগস্ট সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি জাপানি বিমান রওনা দেয়।
বিমান দুরঘটনাঃ-
তাইহোকুতে দুপুর আড়াইটার দিকে যখন সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে বোমারু বিমানটি উড়তে শুরু করে তখনই বিমানের ইঞ্জিন থেকে একটি বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায় এবং বিমানটি দুর্ঘটনা গ্রস্থ হয়ে ভূমিতে বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে বিস্ফোরিত হয়। অনুমান করা হয় সেই বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত্যুবরণ করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
ভিন্ন মতামতঃ-
তবে ভিন্ন মত অনুসারে জানা যায় সেই দুর্ঘটনাতে নেতাজির মৃত্যু ঘটেনি, তিনি অন্য কোথাও আত্মগোপন করেছিলেন। তবে তার শারীরিক মৃত্যু যে ভাবেই আসুক না কেন, সারা দেশের মানুষের কাছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও অমর।
এ কারণেই তার জন্মদিন অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি দিনটি সারা ভারতে জাতীয় ছুটি হিসেবে পালন করা হয় এবং নানা স্থানে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমন ধরণের আরও আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।
Written by Joy Halder.
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন