পশ্চিমবঙ্গে এবারে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু হয়েই গেল! এবারে Electricity ব্যবহারের আগেই দিতে হবে টাকা। রিচার্জ না থাকলে জ্বলবে না লাইট আর ঘুরবে না পাখা। বিদ্যুৎ নিয়ে এবারে নতুন ভাবনায় রাজ্য। তবে এর জন্য কি দিতে হবে বাড়তি টাকা! কবে থেকে পাবেন আপনি, খরচ কি আগের থেকে বেশি না কম, এই Prepaid Smart Meter কতটা স্মার্ট, কাজ কীভাবে করবে, রিচার্জ করবেন কীভাবে – এসব জানতে দেখে নিন আজকের এই প্রতিবেদন।
এবার থেকে অগ্রিম বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হবে, তারপরেই মিলবে পরিষেবা। রিচার্জ শেষ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ সংযোগ! অগ্রিম টাকা দিলে তবেই মিলবে বিদ্যুৎ পরিষেবা! এবার থেকে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহার হবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার। এর মাধ্যমে আগে থেকেই টাকা জমা করতে হবে। জমা করে রাখা টাকা শেষ হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। আবার রিচার্জ করলেই পেয়ে যাবেন বিদ্যুৎ পরিষেবা। অগ্রিম বিল পরিশোধ না করলে আর পাওয়া যাবে না বিদ্যু্ৎ পরিষেবা। নতুন ধরণের এই বিদ্যুৎ পরিষেবার সাথে পরিচিতি ঘটতে চলেছে রাজ্যে।
Prepaid Smart Meter in Electric Use in WB
প্রথমেই এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা নেয়া যাক। ভারতে অন্যান্য রাজ্যে এই Smart Meter -এর ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তবে WB তথা West Bengal -এ এই নতুন অত্যাধুনিক মিটার এর ব্যবহার শুরু হচ্ছে এই প্রথম। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মানুষের কৌতূহল তৈরি হবেই। কারণ মোবাইল ব্যবহারে ‘প্রিপেইড’ কথার সাথে বেশ পরিচিত সাধারণ মানুষ। আর এবারে তার পরিচিতি ঘটতে চলেছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
প্রিপেইড স্মার্ট মিটার এর কাজ
এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার WB Electric Department থেকে চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে রাজ্যে। এই স্মার্ট মিটার হচ্ছে অত্যাধুনিক একটি ইলেকট্রিক ডিভাইস যা শুধুমাত্র মিটার কাজই করবে না। বরং বিদ্যুতের খরচ, বিদ্যুতের ভোল্টেজ লেভেল, গ্রাহকের রিচার্জ করা টাকার পরিমাণ, রিডিং সংক্রান্ত তথ্য কন্ট্রোল রুমে প্রেরণ ইত্যাদি সমস্ত রকমের কাজ করতে সক্ষম।
- প্রিপেইড স্মার্ট মিটার এর মধ্যে থাকবে একটি সিম কার্ড, যেখানে থাকবে ইন্টারনেট সংযোগ।
- সরাসরি রিয়েল টাইম রিডিং নেবে এই Prepaid Smart Meter.
- রিডিং রেকর্ড পাঠিয়ে দেবে বিদ্যুৎ দপ্তরের Control Room পর্যন্ত।
- সেখান থেকে দেখা হবে, আপনার মিটারে কত টাকা রিচার্জ করা আছে, আর আপনি কত খরচ করছেন!
- রিচার্জ শেষ হলেই ‘Auto-Cut’ হয়ে যাবে। ঘুরবে না পাখা আর জ্বলবে না লাইট! মানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে।
- আবার রিচার্জ করলেই চালু হয়ে যাবে এই মিটার।
এবারে প্রিপেইড মোবাইল রিচার্জ এর মত এবার এসে গেছে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার! জানা যাচ্ছে এবার প্রিপেড মোবাইল এর মতোই চালু হবে প্রিপেইড বিদ্যুৎ পরিষেবা। রিচার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা। আবার রিচার্জ করলেই গ্রাহকরা পেয়ে যাবেন বিদ্যুৎ পরিষেবা। আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চালু হতে চলেছে এটি। তবে আপাতত বাড়ির মিটার গুলিতে এর ব্যবহার করা হবে না।
কবে থেকে শুরু হচ্ছে কাজ!
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারি দপ্তর গুলিতে এই পরিষেবা এপ্রিল মাসের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে। এছাড়া অন্যান্য সরকারি সংস্থা গুলিতেও এই স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা করছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা। খুব শীঘ্রই রাজ্যের সমস্ত সাধারণ ইলেকট্রনিক মিটার বদলে ফেলা হবে। তার বদলে আগামী বছরের এপ্রিল মাসে প্রায় 2 লাখ 50 হাজার স্মার্ট মিটার বসানো হবে। এরপর 2025 সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও 40 লাখ থেকে 60 লাখ প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেকের মাথায় প্রশ্ন আসছে, এই নতুন স্মার্ট মিটার বসালে কি কোন অর্থ দিতে হবে?
তাদের জন্য সুখবর রয়েছে। এই মিটার বসাতে কোনরকম অর্থ দিতে হবে না গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর সহ পুরসভা ও পঞ্চায়েতে এই স্মার্ট মিটার বসানো হবে। এছাড়াও যে সমস্ত বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদের কানেকশনের লোড 5 কেভিএ থেকে 50 কেভিএ -র মধ্যে থাকে তাঁদেরও বর্তমান ইলেকট্রনিক মিটার বদলে এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসাতে হবে। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর এই ধরনের প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত মোট 25 হাজার প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। সল্টলেক আর নিউটাউন এলাকাতেই বেশিরভাগ পুরনো মিটার বদলে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ইউরোপের কোম্পানি ইসক্লোমেকো আর ওয়েবলের মতো যৌথ সংস্থার কাছ থেকে এই স্মার্ট মিটার ভাড়ায় নিচ্ছে বিদ্যুৎ বন্টন দপ্তর। মিটার সাপ্লাইয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি বিদ্যুৎ দপ্তরকে। তবে এখনও এই মিটার বসানোর জন্য দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েই গেছে। সেই কারণে কাজ তুলনামূলক ধীরগতিতে হচ্ছে।
যেভাবে চলবে Prepaid Smart Meter!
এই মিটারের মাধ্যমে প্রথমে রিচার্জ করাতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী বিদ্যুৎ পরিষেবা মিলবে। রিচার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। পুনরায় রিচার্জ করলে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়ে যাবে। এর ফলে রাজ্যে বিদ্যুৎ বিল না মেটানোর প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব হবে। বেশ কিছু দপ্তরের বিদ্যুৎ বিল 900 কোটি টাকা থেকে 1 হাজার 200 কোটি টাকার মতো বকেয়া পড়ে আছে। এই বিল মেটানোর জন্য বহুবার বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে মৌখিক ও লিখিতভাবে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
এছাড়াও দার্জিলিং, কোচবিহার ও জঙ্গলমহলের কয়েক বছর আগের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এখনও পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি। সরকারি ও বেসরকারি গ্রাহক মিলিয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা 1 হাজার 700 কোটি টাকার বকেয়া বিল পায়। আপনারা শুনলে অবাক হবেন পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বার্ষিক আয়ের প্রায়
5 শতাংশ থেকে 8 শতাংশ বকেয়া বিলের পরিমাণ। ফলে এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির বিল না মেটানোর মনোভাব পরিবর্তন করতে পারবে। এছাড়াও আগের বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে নতুন মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে না। এবার হয়ত এইসব সংস্থাগুলি বাধ্য হবে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে।
শুধুমাত্র বড় সংস্থাগুলি নয়, এই ব্যাপারে পিছিয়ে নেই রাজ্যের ছোট বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকেরা। অনেকেই নিয়মিত বিদ্যুতের বিল মেটান না। তাই এবার প্রিপেইড স্মার্ট মিটার এইসব সমস্যার সমাধান এক নিমেষে করে দেবে। রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিমে প্রায় 7 হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। এই টাকা পেতে গেলে প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসানো বাধ্যতামূলক। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্থায় এই মিটার বসানো হয়ে গেছে। কিন্তু সফটওয়্যার ইন্টিগ্রেশন -এ কিছু সমস্যা থাকার কারণে আপাতত প্রিপেড পেমেন্ট ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের পরে প্রিপেড পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।
এই সরকারি কর্মচারীদের দুর্গা পূজোর ছুটি বাতিল! বিজ্ঞপ্তি দেখুন।
তবে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠনের তরফে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার ব্যবহারের বিরুদ্ধে রাজ্যের একাধিক বিদ্যুৎ দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে, পরবর্তীতে তাদের তরফে আন্দোলনে নামার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের মতে, “নতুন মিটারে গ্রাহকদের সমস্যা বরং বাড়বে, বিভিন্ন রাজ্যে এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের খরচ বেড়ে গিয়েছে।” কিন্তু তাদের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে বিদ্যুৎ দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার অত্যন্ত আধুনিক, এতে গ্রাহকদের সুবিধা অভূতপূর্বভাবে বেড়ে যাবে। এটি ডিজিটাল মিটার থেকেই অনেক বেশি উন্নত মানের হয়ে থাকে। যেমন ধরুন, বাড়িতে বিদ্যুতের কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলেই, দপ্তরের কন্ট্রোল রুমে তার সিগন্যাল চলে যাবে, যার ফলে সেইসময় গ্রাহক বাড়িতে না থাকলেও খবরটি নিজের মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জেনে যাবেন।
আবেদন শুরু হল পিএম বিশ্বকর্মা যোজনায়! কীভাবে, কোথায় করবেন- দেখুন।
এমন আরও নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের সাথে থাকুন। তবে এই প্রিপেইড স্মার্ট মিটার নিয়ে আপনার মতামত আমাদের লিখে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। নতুন নতুন আপডেট পেতে দেখতে থাকুন। সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
Post Disclaimers
'whatsupbengal.in' একটি বাংলা অনলাইন ব্লগ নিউজ পোর্টাল। এই নিবন্ধে এবং আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রদত্ত তথ্যগুলি বিশ্বাসযোগ্য, যাচাই করা এবং অন্যান্য বড় মিডিয়া হাউস থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ওয়েবসাইটে দেওয়া বিষয়বস্তু শুধুমাত্র তথ্য ও শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে।
যোগাযোগ - wspbengal@gmail.com
নম্বর - 6297256750 (হোয়াটসঅ্যাপ)
আমাদের সাথে যুক্ত থাকুন